ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তীরে এসে তরী ডুবল লঙ্কানদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

তীরে এসে তরী ডুবল লঙ্কানদের

মিথুন আশরাফ ॥ ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ১২ রানে হারিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। এই জয়ে সিরিজে দুই ম্যাচে এক জয় তুলে নিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরেছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে টস জিতে শ্রীলঙ্কা আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দেখান। সিকান্দার রাজার অপরাজিত ৮১ ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ৭৩ রানে বড় সংগ্রহই গড়ে। ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৯০ রান করে। জবাব দিতে নেমে ৪৮.১ ওভারে ২৭৮ রান করতেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। টেন্ডাই চাতারা ৪ উইকেট নেন। স্বাভাবিকভাবেই কুয়াশার বিষয়টি লঙ্কানদের মাথায় ছিল। এখন শীতকাল চলছে। এমন সময় বাংলাদেশে খেলা মানেই হচ্ছে টস জিতবে যে দল তারাই ফিল্ডিং নিতে চাইবে। বিকেলের পরে যে কুয়াশা পড়ে। তাতে বোলারদের বল করতে সমস্যা হয়। বল হাতের মুঠোয় ঠিকমতো আটকে রাখতে সমস্যা হয়। তাতে বল যেভাবে করতে চান বোলাররা তা করতে পারেন না। ব্যাটসম্যানদের জন্য সুবিধা হয়ে যায়। আগে ব্যাট করা দলকে বিপদে ফেলতে পারলেই জয় নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শ্রীলঙ্কাও তাই টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেয়। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের ইনিংসে ধস নামাতে পারেননি লঙ্কান বোলাররা। তাতে জিম্বাবুইয়ে বড় সংগ্রহ গড়লে শুরুতেই যেন বিপাকে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। যখন ৪৭ রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ২ উইকেট তুলে নেয় জিম্বাবুইয়ে তখন জিম্বাবুইয়ে জিতে যেতে পারে, সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু কুশল পেরেরা এমনই ব্যাটিং করেন জিম্বাবুইয়ের জয়ের পাল্লা হাল্কা করে দেন। কুশল পেরেরা ও এ্যাঞ্জলো ম্যাথুস মিলে দলকে ১৩২ রানে নিয়ে যান। এমন সময় পেরেরা আউট হয়ে গেলে আবার জিম্বাবুইয়ের হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। পেরেরা ৮০ রান করে শ্রীলঙ্কাকে অনেক এগিয়ে দেন। পেরেরা ও ম্যাথুস মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৮৫ রানও স্কোরবোর্ডে যোগ করেন। পেরেরার পর যখন ১৫৭ রানে ম্যাথুসও (৪২) সাজঘরে ফিরেন তখন জিম্বাবুইয়ের হাতে চলে আসে ম্যাচ। এরপর চান্দিমাল (৩৪) চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি। দেখতে দেখতে ২২৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেটেরও পতন ঘটে যায়। থিসারা পেরেরা ম্যাচটাকে ঘুরিয়েই দিচ্ছিলেন। দলকে জয়ের কাছাকাছিও নিয়ে যান। দলের যখন জিততে ২১ রান দরকার এমন সময় আউট হয়ে যান পেরেরা (৬৪)। আর ৩ রান হতে চামিরা আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয়। শ্রীলঙ্কার শেষ তিনটি উইকেটই নেন চাতারা। শুরুতে মেন্ডিসকেও সাজঘরে ফেরান চাতারা। শ্রীলঙ্কা শুরুতেই বিপাকে পড়লেও জিম্বাবুইয়ে কিন্তু শুরুতে ছিল দুর্দান্ত। ব্যাট হাতে দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সোলেমন মিরে মিলে তো জিম্বাবুইয়েকে ৭৫ রানে নিয়ে যান। মিরে (৩৪) আউট হলে এই জুটি ভাঙ্গে। এরপর ক্রেইগ আরভিন (২) ৮৫ রানে আউট হলে যেন একটু শঙ্কা জাগে। ব্যাটিং ধসে নাকি পড়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে গিয়েই আবার দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাসাকাদজা ও ব্রেন্ডন টেইলর মিলে ৫৭ রানের জুটি গড়ে দলকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যান। এমন সময় ৮৩ বলে ১০ চারে ৭৩ রান করা মাসাকাদজা সাজঘরে ফেরেন। ১৬৯ রানে গিয়ে টেইলরও (৩৮) যখন আউট হয়ে যান তখন আবার বিপত্তিতে পড়ে জিম্বাবুইয়ে। একটা সময় মনে হয়েছিল ৩০০ রান করে ফেলবে জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু দ্রুত সময়ে এ দুই ব্যাটসম্যান আউট হওয়াতে তাতে বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি জিম্বাবুইয়ে কী বড় স্কোর গড়তে পারবে শেষ পর্যন্ত? সেই প্রশ্নও ওঠে। কিন্তু সিকান্দার রাজা ও ম্যালকম ওয়ালার মিলে দলের বিপত্তিই শুধু দূর করেননি, দলকে বড় সংগ্রহের পথেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দুইজন মিলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন। দলকে ২০০ রানের ওপরে নিয়ে যান। ২২৬ রানে ওয়ালার (২৯) আউট হলেও সিকান্দার উইকেট আঁকড়ে থাকেন। তাতেই কাজ হয়। শেষে পিটার মুরকে (১৯) নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন সিকান্দার। ষষ্ঠ উইকেটে ৬১ রানের জুটিও গড়েন সিকান্দার ও মুর। তাতেই দলের রান ২৮৭ রানে চলে যায়। যখন ইনিংসের ৫০ ওভার শেষ হতে ২ বল বাকি তখন মুর আউট হন। এরপর আরও ৩ রান যোগ হয়ে ২৯০ রান হয়। যা জিম্বাবুইয়ের স্কোরবোর্ড অনেক মজবুত করে তোলে। সিকান্দার দুর্দান্ত ব্যাটিং করে, ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে ৬৭ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন। শুরুতে মাসাকাদজা ও শেষে সিকান্দারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহই গড়ে জিম্বাবুইয়ে। এই রান করে জিতেও জিম্বাবুইয়ে। এ জয়টি পেয়ে শ্রীলঙ্কাকে টানা তিনটি ওয়ানডেতেও হারায় জিম্বাবুইয়ে।
×