ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি মেলা উদ্বোধন

বাড়ির ছাদে সবজি চাষের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

বাড়ির ছাদে সবজি চাষের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে এখন বাড়ির আঙ্গিনাতেই ফসল ফলিয়ে কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে কর্মসংস্থান হচ্ছে বিশেষ করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে এটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় বলেও জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিন দিনব্যাপী জাতীয় সবজি মেলা-২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরে মেলার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় মন্ত্রী ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের ছাদে সবজি চাষের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছাদে সবজি চাষ করলে বায়ুম-ল অনেকটা পরিশোধিত হয়। এ ছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সবজিও সংগ্রহ করা যায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল হাইব্রিড ফসল চাষ। এটি বাস্তবায়ন করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অনেক কুচক্রী মহল কিছু এনজিও ষড়যন্ত্র করেছিল। এখন হাইব্রিড ফসলের জন্য আমার কৃষক লাভবান হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। মতিয়া চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ইউরোপে রেড মিটের চেয়ে ভেজিটেবল মিটের চাহিদা বাড়ছে। ভেজিটেবল মিট হিসেবে কাঁচা কাঁঠাল বেশ স্বাস্থ্যকর। এ বছর আমাদের কাঁচা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে। জলবায়ুর যে সুবিধা আছে তাতে সারাবছর দেশে সবজি চাষ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে সবুজ সবজিতে এগিয়ে গেলেও ডাল জাতীয় সবজিতে পিছিয়ে আছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আবদুল আজিজ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ হারুনর রশীদ। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, উন্নত দেশে মাথাপিছু প্রতিদিন সবজি গ্রহণের পরিমাণ দেশ ভেদে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। ভিটামিনের পর্যাপ্ত প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন প্রকার সবজি গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। দেশে চাষকৃত সবজির সংখ্যা প্রায় ৯০টি যার মধ্যে ৩০-৩৫টিকে প্রধান সবজি বলা হয়ে থাকে। ২০১৫-১৬ বছরে মোট সবজি উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। দেশের সবজি চাষের জন্য যে পরিমাণ জমি ব্যবহার করা যাচ্ছে তাতে মাথাপিছু মাত্র ৬০-৭০ গ্রাম সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে। যদিও সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ২২০ গ্রাম সবজি। বিগত বছরগুলোতে সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ খুব বৃদ্ধি না পেলেও মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে কিভাবে সবজি চাষের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়েও তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে। সবজিতে সঠিক মাত্রা না মেনে এবং সঠিক বালাইনাশক না ব্যবহার করার ফলে সবজি অনেক সময় অনিরাপদ হয়ে উঠছে। সে জন্য উৎপাদনের সঙ্গে এই বিষয়টির আরও গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়াও পরিবর্তিত জলবায়ুতে পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি চাষে ২০টি সুপারিশও করা হয় মূল প্রবন্ধে। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আবুল কাশেম ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন। ‘সারাবছর সবজি চাষে, পুষ্টি-স্বাস্থ্য-অর্থ আসে’ এই স্লোগানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় শতাধিক রকমের সবজি প্রদর্শিত হয়। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক জানান, মেলায় সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ৮২টি স্টল ও ৪টি প্যাভিলিয়ন অংশগ্রহণ করছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হরেক রকমের সবজি দেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বিস্তারিত জানতে পারবে।
×