ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিপজ্জনক জঙ্গী আস্তানা!

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮

বিপজ্জনক জঙ্গী আস্তানা!

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গণভবনের সামনে জঙ্গী আস্তানা শীর্ষক সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক বৈকি। শুক্রবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী র‌্যাব রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তিন জঙ্গীকে হত্যা করে। বাড়ির মালিক বিমানের পার্সার। অভিযান পরিচালনাকালে জঙ্গীরা র‌্যাবের প্রতি গ্রেনেড নিক্ষেপসহ গুলিবর্ষণ করে। পরে র‌্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে নিহত হয় তিন জঙ্গী, যারা জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। তল্লাশি চালিয়ে ঘর থেকে অবিস্ফোরিত বোমা, দুটি পিস্তল, তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র ও সুইসাইডাল ভেস্ট, ১৪টি ডেটোনেটর, পাওয়ার জেল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের ভাষ্য, আশপাশে বিধ্বংসী কোন কার্যক্রমের জন্য জঙ্গীরা সেখানে অবস্থান করছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে জঙ্গীরা অন্তত ২৪ বার সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে, যেগুলো ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায়। র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা বাহিনীসহ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নিয়মিত নজরদারির পরও দেখা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। গত বছর রাজধানীসহ কয়েকটি স্থানে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে জঙ্গীরা। এ থেকে বোঝা যায় যে, জঙ্গীরা যেন হঠাৎ করেই আবারও আগ্রাসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার তাদের টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। সরকার ইতোমধ্যে আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গীদের হাতবোমা, অস্ত্রশস্ত্র, জিহাদী বইসহ ধরাও হচ্ছে। গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার খবরও আছে। এত কিছুর পরও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি এবং জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তানী সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময় সময় বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে তা চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎস, উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে দৃঢ় গতিতে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য।
×