ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা চায় দোহা

ক্ষতিপূরণের আবেদন করবে কাতার

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

ক্ষতিপূরণের আবেদন করবে কাতার

কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আট মাসব্যাপী অবরোধের ফলে দেশটি নানা কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দোহা প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন করবে বলে জানা গেছে। এএফপি, আলজারিয়া ও গালফ টাইমস। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লুলওয়া আল খাতের বুধবারের এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। খাতের তার দেশের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের অবরোধকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তেল ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ তার দেশ ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার ক্ষতিপূরণের জন্য আইনগতভাবে সব পন্থাই অনুসরণ করবে। কাতারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তার দেশের ওপর আরোপিত অবরোধে সে দেশের কর্মরত দেশী-বিদেশী কোম্পানি, বেসামরিক নাগরিকসহ বিদেশী অভিবাসীরাও বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এসবের আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছেÑ যার খসড়া হিসাব মতে এই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্লেষকদের মতে, কাতারের ওপর জল, স্থল ও আকাশপথে সর্বাত্মক অবরোধের প্রেক্ষিতে দেশটিতে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিদেশ থেকে বিমানযোগে নিয়ে আসতে হয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ বাবদ কয়েক বিলিয়ন ডলারা খুব বেশি কিছু নয়। উল্লেখ্য, মিসরসহ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এই চারটি দেশ গত জুন মাসে কাতারের সঙ্গে আকস্মিকভাবে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশটির ওপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয়। তাদের অভিযোগ ছিল যে দেশটি ইসলামী চরমপন্থীদের সহযোগিতা করা ছাড়াও সৌদি আরবের চির বৈরী দেশ ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। সৌদি জোটভুক্ত দেশগুলো কাতারের কোন বিমানকে তাদের দেশে অবতরণ বা আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেয় নাÑ এছাড়া সামুদ্রিক বন্দরসমূহে কাতার অভিমুখে চলাচলকারী কোন জাহাজের প্রবেশাধিকার দেয়া হয় না। এছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলো অবরোধের প্রথম দিন থেকে কাতারের সঙ্গে তাদের স্থল সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের এসব অভিযোগ কাতার অস্বীকার করে বলেছে, তাদের এই অবরোধ আরোপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়ে দোহা সরকারের পতন ঘটানো। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের ওপর আরোপিত অবরোধে এই অঞ্চলের জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে লুলওয়া খাতের বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের দেশের ওপর আরোপিত অবরোধ অবসানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালত অথবা বিশ্ব সংস্থাভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ১৭ থেকে ২৪ নবেম্বর (৮ দিন) কাতার সফরকালে সাধারণ নাগরিক ছাড়াও ২০টি সরকারী ও সুধী সমাজভুক্ত মানুষের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। অবরোধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং জনজীবনে তার প্রভাব কতটুকু তা নিয়ে এক বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদন মানবাধিকার কর্মকর্তাগণ প্রকাশ করেন এবং কাতার জাতীয় মানবাধিকার কমিটির কাছে তার একটি অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে খাতের বলেন, এতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত আন্তর্জাতিক মতামত তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এই অবরোধ কাতারী জনগোষ্ঠীর নৈতিক মনোবল ভেঙ্গে দেয়া ছাড়াও বিপুল অর্থনৈতিক ও বস্তুগত ক্ষতিসাধন করেছে। কাতার মানবাধিকার কমিশনের প্রধান আলী বিন সুমাইখ আল মারি চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে বলেন, জাতিসংঘ কমিশনের গবেষণায় এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ‘এই অবরোধ অবৈধ।’ একতরফা পক্ষপাতদুষ্ট ও স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব পরায়ন মনোভাব প্রসূত এই অবরোধের ফলে কাতারের সাধারণ মানুষ ও অভিবাসীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এদিকে, কাতার ও সৌদি জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান তিক্ত সম্পর্কের এক সম্মানজনক সমাধানের লক্ষ্যে কুয়েত শুরু থেকেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। কুয়েতী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহামেদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি বুধবার কাতার টিভি আল হাকীকার সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, উপসাগরীয় ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলোর মধ্যে যে কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কুয়েতের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি আন্তরিকভাবে আগ্রহী। তিনি বলেন, একটি সার্বভৌম দেশের (কাতার) ওপর অবরোধ প্রত্যাহার কোন ধরনের দাবি বা পূর্বশর্ত চাপিয়ে দেয়া যায় না। জোটভুক্ত দেশের প্রধান হিসেবে সৌদি আরবের আমাদের মধ্যস্থতার উদ্যোগকে স্বাগত জানানো উচিত কিন্তু তারা এখনও তা করছে না।
×