ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বইছে শৈত্যপ্রবাহ

উত্তরাঞ্চলে জনজীবন কাহিল, তাপমাত্রা আরও নামবে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

উত্তরাঞ্চলে জনজীবন কাহিল, তাপমাত্রা আরও নামবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘শীত আছে তো, শীত নেই’ অবস্থা ছিল পৌষের শুরু থেকেই। বৃহস্পতিবার থেকে এই অবস্থা আর নেই। খোদ রাজধানীবাসীও বুঝতে পেরেছেন শীত এসে গেছে। সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। বইছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে তারা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মৌসুমের প্রথমবারের মতো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অন্য বিভাগীয় শহরের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা কমে গেছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে বলে উল্লখ করেন তারা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং সংলগ্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে দেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে শীতের সঙ্গে কুয়াশাও পড়ছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। এদিকে ঘন কুশায়ার কারণে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টি সীমা অনেক নেমে গেছে। দিনের বেলায় যানবাহনগুলোকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রচ- শীতের ফলে জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। হঠাৎ করেই শীতের প্রকোপ বাড়ায় শিশু ও বয়স্করা বিপাকে পড়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ শিশু ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে আমাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। ঋতু বৈচিত্রের হিসাব অনুযায়ী এখানে শীত নামে ডিসেম্বরের শেষ থেকেই। এ বছর প্রথম থেকে শীতে বৈচিত্রহীনভাব লক্ষ্য করা গেছে। গত ২৩ নবেম্বর থেকে দেশের উপর দিয়ে শীতল হাওয়া বইতে থাকে। একদিন পরেই তা কেটে যায়। মাঝে দুই দফায় লঘুচাপ এবং নিম্নচাপের প্রভাবে শীত উধাও হয়ে যায়। মধ্য ডিসেম্বর থেকে কখনও শীত আছে তো নেই, নেই অবস্থা চলছে। বৃহস্পতিবার থেকেই হঠাৎ করেই জেঁকে বসেছে শীত। অবশ্য দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছুদিন ধরে শীতে প্রকোপ বাড়ছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই মৌসুমে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া দেশে অন্যান্য এলাকায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় তাপমাত্রা কমে গেছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম তাপমাত্রা। তাপমাত্রা আরও কমবে কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা জানায়, ঢাকার মত অন্য বিভাগীয় শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গেছে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে ৮, ময়মনসিংহে ৮, খুলনায় ১০, বরিশালে ১০ দশমিক ৪, রংপুরে ৯, সিলেটে ১৩ দশমিক ৬, চট্টগ্রামে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৬, টাঙ্গাইলে ৮ দশমিক ৫, ফরিদপুরে ৯ দশমিক ৪, গোপালগঞ্জে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ। ঘন কুয়াশা, বৃষ্টি ও আর প্রচণ্ড বাতাসের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। পাশাপাশি শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। সদর হাসপাতালের ১৩ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে সকাল থেকে ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। বহির্বিভাগে অসংখ্য শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা নেমে আসার পাশাপাশি ঘনকুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও ॥ কুয়াশায় ঢাকা চারদিক, তার উপর হিমেল হাওয়া সবমিলে শীতের তীব্রতা প্রকট হয়ে উঠেছে। তার উপর কয়েকদিন ধরে এখানে সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় হাসপাতালে শিশু বৃদ্ধ রোগীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। উত্তরের সর্বশেষ জেলা হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা প্রতি বছরই বেশি হয়। গত সোমবার থেকে এখানে সারাদিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের মুখ দেখা মিলছে না। তার উপর হিমেল হাওয়ায় শীতের দাপট বেড়ে গেছে। মওসুমের শুরু থেকে এখানে কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত চারদিক কুয়াশার ঢাকা পড়ছে। রাতে বৃষ্টির ন্যায় ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে। প্রচণ্ড শীতে শীতার্ত মানুষ চটের বস্তা কাঁথা হিসেবে ব্যবহার করে রাতযাপন করছে। সকাল হতেই তারা সন্তান পরিজন নিয়ে আগুনের তাপ নিয়ে শরীর গরম করতে ব্যস্ত থাকে। রংপুর ॥ কনকনে শীতের কারণে কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় খেটে খাওয়া ও দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেশি। এছাড়া শীতজনিত রোগবালাইও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। খেটে খাওয়া মানুষ সময় মত কাজে যেতে পারছে না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম কমে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে দিনের বেলাতেও দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে । অনেক স্থানে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত কারণে আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি রোগী শিশু ও বৃদ্ধ। বৃদ্ধরা হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে এবং শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। দিনাজপুর ॥ জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। প্রবাহিত হচ্ছে হিমেল আবহাওয়া ও তার সঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শীতের প্রকটের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জেলায় নিম্ন আয়ের জনসাধারণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। রাজশাহী ॥ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার আগে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটিই এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস। ভোর থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে পড়ছে ঘন কুয়াশার। কমছে দৃষ্টিসীমা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমশীতল হাওয়া। এতে কাঁপছে উত্তরের জনপদ। বিশেষ করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্ভোগের অন্ত নেই। সকালে পথের ধারে খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে ছিন্নমূল মানুষদের। নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানগুলোয়। সরকারী, সেবরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন শীতার্তরা। বগুড়া ॥ ঠক ঠক করে কাঁপছে। রাতভর ঘন কুয়াশা। দৃষ্টি সীমা বড়জোর এক মিটার। শিশির ঝরছে মৃদু বৃষ্টির মত। সকালে সূর্যের দেখা নেই। কুয়াশার ঘন মেঘ ঢেকে দিয়েছে। মেঘের আড়াল থেকে রোদ শুধু উঁকি দেয় কিছুক্ষণের জন্য। রোদ পোহানোর জো নেই। গ্রামে খড়কুটা জ্বালিয়ে চারধারে বসে সকাল সন্ধ্যায় উষ্ণতা নেয় মানুষ। তারপর ফের কাঁপুনি। নগর মহানগরে কংক্রিটের বন। শীত কম অনুভূত হওয়ার কথা। তা নয়। একেবারে উল্টো। মাথা কান নাক মুখ মাফলারে ঢেকে গরম কাপড় পড়ে বের হওয়ার পরও শীতের শক্তির কাছে হার মানতে হচ্ছে। এবারের শীত মৌসুমের পৌষে কঠিন হয়ে পড়েছে কাঁপুনি ঠেকানো। বলাবলি হচ্ছে কী হবে মাঘের শীতে! মাগুরা ॥ প্রচণ্ড শীতে মাগুরায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগুন জ্বালিয়ে অনেকে শীত নিবারণ করছে । শীতের কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া ,জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে । হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশু রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে । ভোর ও রাতের বেলা মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না । যানবাহন চলাচলে মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটে । বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শহরের পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে। ঈশ্বরদী ॥ বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে ঈশ্বরদীসহ আশপাশের এলাকায় হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করে। সকালে সূর্যের দেখা মেলে না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস আর কুয়াশায় মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। অফিস আদালতে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হয় না। বেলা ১টায় সূর্য উঠায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসার পর কিছু কিছু মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে থাকে। সকাল থেকেই ট্রেন ও দূরপাল্লার যানবাহন গুলি হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। পশুকূলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
×