ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি দেয়া যাবে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি দেয়া যাবে

তপন বিশ্বাস ॥ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটালাইজ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যশোরের মনিরামপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শীঘ্রই রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন। এতে অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি প্রদান করতে পারবেন জনগণ। দেশের বিভিন্ন এসিল্যান্ড অফিসে সীমাহীন দুর্নীতি রোধে জরুরী ভিত্তিতে এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি প্রদান প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। দেশের একটি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিঘ্রই ঢাকায়ও এই কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রম চালু হলে মানুষ হয়রানি ও দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পাবে। একই সঙ্গে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজও আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করা হবে। এ কাজটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া হলে রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদানও অনলাইনের আওতায় আনা হবে। এতে ভূমি মালিকরা একটি জায়গা থেকেই সব সেবা পাবেন। সূত্র জানায়, ভূমির কাজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকবে। দীর্ঘদিন ধরেই ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজটি নেয়ার চেষ্টা করে আসছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজটি এখন পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা সম্ভব হয়নি। কাজটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলেই রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, খাজনা পরিশোধসহ অন্যান্য সেবা দিতে এ মন্ত্রণালয় হবে ওয়ানস্টপ সার্ভিস। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্র্রই পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর বারিধারায় অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধের প্রক্রিয়া চালু হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে খাজনা পরিশোধ ও নামজারির ফি পরিশোধের অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হবে। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলার ভূমি সহকারী কর্মকর্তার অফিসের রেজিস্ট্রার বুক-২ কম্পিউটারাইজড করা হবে। এরপর নিজস্ব সফটওয়্যারে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হবে। জমি ক্রয়-বিক্রয়, বায়নাপত্র, চুক্তিপত্রসহ নানা ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ ২০১০ সালে গ্রহণ করা হলেও কাননগো, সার্ভেয়ার ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা সম্মিলিত তদ্বিরের মাধ্যমে তা ঠেকিয়ে রাখে। অভিযোগ আছে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় উপঢৌকন দিয়ে এটিকে বিলম্বিত করছে। মন্ত্রণালয়ের এই জাতীয় কর্মকর্তাদের খুশি করতে এসিল্যান্ড অফিসগুলোতে হয়রানি বেড়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এসিল্যান্ড অফিসে সাধারণ একটি নামজারি করতে ৭ হাজার দুইশত টাকা গুনতে হয় সেবা গ্রহণকারীকে। এর মধ্যে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা থেকে নামজারি সহকারী কাম ক্যাশিয়ার, সার্ভেয়ার, কাননগো, কোন কোন ক্ষেত্রে এসিল্যান্ডের জন্য ভাগ করা থাকে। ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত কেসের ক্ষেত্রে (ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এমন দাগভূক্ত জমির ক্ষেত্রে) অধিগ্রহণের ছাড়পত্র সংশ্লিষ্ট ফাইলে সম্পৃক্ত থাকলে দিতে হয় ১৭ হাজার টাকা। আবার অধিগ্রহণের ছাড়পত্র সংশ্লিষ্ট ফাইলে সম্পৃক্ত না থাকলে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা গুনতে হয়। ‘খ’ তালিকাভুক্ত হলে জমির পরিমাণ ১০ কাঠা বা তার কম হলে ১০ হাজার টাকা আর পরিমাণ বেশি হলে কাঠাপ্রতি দুই হাজার টাকা করে দিতে হয়। ডিসিআর, মিস কেসের ক্ষেত্রেও দিতে হয় নির্ধারিত রেটে টাকা। মিস কেসের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা চুক্তির পরও বেশি রেট প্রদানকারীর পক্ষে রায় প্রদান করা হয়। এছাড়া কোন কোন অফিসে জাল দলিলের মাধ্যমেও নামজারি করে দিচ্ছে সংঘবদ্ধ এই চক্র। এতে তারা পাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কোন কোন এসিল্যান্ড অফিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি দালাল গ্রুপ এই কাজ করে সেই জমি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরে পড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কর্মচারীদের একটি জমির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। জানতে পেরে নামজারি হওয়ার মুহূর্তে তারা তা আটকিয়ে দেয়। বেশি ঘুষ আদায়ে কোন কোন সার্ভেয়ার নিজেকে কাননগো পরিচয় দিয়ে থাকে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, জমির নামজারি ও খাজনা পরিশোধে অনলাইন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি চালু হলে মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পাবে। দুর্নীতির শিকারও হতে হবে না। একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
×