ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুরো মেলায় টুং টাং শব্দ, ফাঁকা মেলায় সেলফির আমেজ

বাণিজ্যমেলায় এখনও চলছে নির্মাণকাজ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

বাণিজ্যমেলায় এখনও চলছে নির্মাণকাজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুরু হয়ে গেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা যা মানুষের মিলনমেলাও বটে। মেলার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রস্তুত হতে পারেনি। মেলাজুড়ে এখনও চলছে প্যাভিলিয়ন, স্টল নির্মাণের কাজ। ফলে গোটা মেলায়ই টুং টাং শব্দ। আজ এবং আগামীকালকের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত হবে বলেও জানা গেছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে দ্বার খুলেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার। দেশী-বিদেশী নানা পণ্যের সমাহার থাকে এই মাসব্যাপী মেলায়। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের ওপর থাকে নানা ছাড়ও। বছর ঘুরে নতুন বছরের প্রথম দিনই মেলার দ্বার খুললেও এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠেনি। বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নের প্রস্তুতি ও সাজসজ্জার কাজ চলছে অবিরত। যদিও মেলায় আগত দর্শনার্থীরা এতে বেশ ক্ষুব্ধ। টিকেট কেটে অপ্রস্তুত মেলা দেখে এই ক্ষোভ তাদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার মেলায় সকালে আগত দর্শনার্থী নেই বললেই চলে তবে বিকেলের দিকে কিছু দর্শক ঘুরতে আসে মেলায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে তাদের পণ্যের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ চলতে দেখা গেছে। এদিকে মেলায় তেমন দর্শনার্থী না থাকার কারণে মেলার মাঠ প্রায় ফাঁকা। আর ফাঁকা মেলায় যারা এসেছেন সবাই মেতেছেন সেলফির আমেজে। শুধু দর্শনার্থী নয়, মেলায় বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরাও সেলফিতে মেতে উঠেন। বিক্রয় প্রতিনিধি সালমা আইরিন ও তার বান্ধবীরা বলেন, কয়েকদিন পরই পুরো কাজে ব্যস্ত থাকব এখনও মেলায় লোকজন নেই আমাদেরও তেমন কাজ নেই। তাই ঘুরছি আর সেলফি তুললাম। এদিকে প্রবেশ গেটগুলোতেও নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা থাকলেও দর্শনার্থী কম থাকায় তাদেরও কাজ একটু কম। মেলা প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে ময়লার স্তূপ। স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণে ব্যবহৃত জিনিসপত্রও যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নির্মাণ শ্রমিকরা হাতুড়ি দিয়ে বিভিন্ন পেরেক ঠুকছেন। আবুল খায়ের গ্রুপের প্যাভিলিয়ন নির্মাণ চলছে কর্মকর্তারা আশা করছেন দু’একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। পাশেই আকিজ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল, বেঙ্গল, আরএফএল পুরোদমে প্রস্তুত হয়ে মেলায় দর্শনার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে। এছাড়াও মা ও শিশুদের জন্য একটি কেন্দ্র চালু হয়নি। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, একটু সময় লাগবে। পোলার আইসক্রিমের বিক্রি শুরু হলেও প্যাভিলিয়ন অপ্রস্তুত। দায়িত্বরত কর্মকর্তা রিঙ্কু জানান, এখনও রঙের কাজ বাকি। আকিজ ভেবারেজের কর্মকর্তা সুমন বলেন, আমাদের প্যাভিলিয়ন শুক্রবারের আগেই পুরো প্রস্তুত হয়ে যাবে। এছাড়াও মেলায় দেখা গেছে, স্কয়ারের চপস্ট্রিসহ বিভিন্ন ফেব্রিক্সেও চলছে পুরোদমে কাজ ও ঘষামাজা। তবে ফার্নিচার নাভানা, হাতিল, আখতারসহ অন্যান্য প্যাভিলিয়ন ইতোমধ্যেই তাদের কাজ শেষ করে ফেলেছেন। মেলার আরও দেখা যায়, এবার প্রধান গেটটি তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে। মেলা আয়োজক কমিটির একাধিক কর্মকর্তার জনকণ্ঠকে জানান, প্রতিবছরই মেলা শুরুর প্রথম দিকে এমন থাকলেও দু-তিনদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যায়। প্রথম দিক দিয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলেও জানান কর্মকর্তারা। তবে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সেকথায় নারাজ। ক্ষোভ প্রকাশ করে আকাশ নামের দর্শনার্থী বলেন অনেক আশায় মেলায় আশি টিকেট কাটি তবে মেলা প্রস্তুত নয়। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। আরেক দর্শনার্থী জানান, আমরা বিভিন্ন প্যাভিলিয়নের নান্দনিক ডিজাইনও দেখতে চাই মেলায় তবে তারা নিজেরাই প্রস্তুত নয়। মেলায় প্যাভিলিয়ন স্টলগুলো পুরো প্রস্তুত না হলেও খাবারের স্টল, রেস্তরাঁগুলো পুরোদমে তাদের বিক্রি শুরু করেছে। বিদেশী প্যাভিলিয়ন রয়েছে ২৬টি যার অনেকগুলোতে এখনও কাজ চলছে। সংরক্ষিত প্যাভিলিয়নগুলোতেও কাজ চলামান দেখা গেছে। মেলায় ফুড স্টল রয়েছে ৩১টি। অধিকাংশই তাদের বিক্রি বেশ জমজমাট করতে দর্শক ডাকতে দেখা গেছে। মেলায় বিভিন্ন স্যালোয়ার-কামিজের স্টলগুলোতেও তাদের পণ্য পসরা সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। তবে কোন স্টলে ভিড় না থাকায় বিক্রয়কর্মীরা আয়েশ করে গল্প করে সময় পাড় করছেন। এদিকে মেলায় ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদফতরও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি তবে তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রলাম চালিয়ে যেতেও দেখা গেছে। গতকালই অভিযোগের ভিত্তিতে ভূয়া ভাউচারের জন্য দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে একটি খাবারের স্টলকে। ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মনজুরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ বছর গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ আকারে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন তৈরি হয়েছে। ছোট-বড় সবাই বেশ আগ্রহ এই প্যাভিলিয়নের প্রতি। যারা এসেছেন তারা প্যাভিলিয়নের সামনে ভেতরে ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে রাখার চেষ্টা করছেন। এ বছর বঙ্গবন্ধুর ২৬টি চিত্রকর্মস্থান পেয়েছে প্যাভিলিয়নে। এছাড়াও প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। মেলায় সংশ্লিøষ্টরা জানিয়েছেন, মেলা জমজমাট হতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে।
×