ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গরুর শিং প্রশ্নে গণভোট

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

গরুর শিং প্রশ্নে গণভোট

গরুর শিং থাকা উচিত, না আগেই কেটে দেয়া উচিত? সুইজারল্যান্ডের কৃষকদের মধ্যে এই নিয়ে চরম বিতর্ক চলছে। আরমিন কাপাউল নামের এক কৃষকের উদ্যোগে এই প্রশ্নে গণভোট হতে চলেছে। প্রকৃতির গণ্ডির মধ্যেই কৃষি কাজ চান এই কৃষক। কখনোই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেননি। সব সময়ে নিজের পথেই চলেছেন আরমিন। বরাবরই গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা ভেঙে এসেছেন তিনি। একবার কোন লক্ষ্য স্থির করলে তিনি কাজটা করেই ছাড়বেন। যেমন তার মতে, গরুর শিং থাকা উচিত। জন্মের সময়ে তা থাকলেও সুইজারল্যান্ডের প্রতি ১০টি বাছুরের মধ্যে ৮টির শিং পুড়িয়ে দেয়া হয়, যাতে সেগুলো বড় হয়ে গুঁতো মারতে না পারে। পশুদের জন্য সেই প্রক্রিয়া প্রায়ই বড় কষ্টকর হয়। আরমিন মনে করেন, এই রীতি পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা গরুর শিং দিয়েছেন, তাই আমার কাছে সেগুলি সেই প্রাণীরই সম্পত্তি। সুইজারল্যান্ডের গরুর শিং ফিরিয়ে দিতে তিনি এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রথম কয়েক বছর ধরে তিনি অনুরোধ-উপরোধ, আবেদন-নিবেদন করে চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা সায় দেয়নি। তারপর তিনি ‘গরুর শিং’ নামের এক উদ্যোগ শুরু করেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেড় লাখের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। সুইস আইন অনুযায়ী গণভোট আয়োজনের জন্য যত স্বাক্ষরের প্রয়োজন, এই সংখ্যা তার চেয়ে অনেক। কয়েক মাসের মধ্যে ৫০ লাখেরও বেশি সুইস ভোটার এই প্রশ্নে তাদের রায় জানাতে পারবেন। আরমিন তার অবস্থানের পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাবেন, এমন সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সরকার, সংসদ ও কৃষক সংগঠন অবশ্য আরমিনের উদ্যোগের বিরোধিতা করে চলেছে। সুইস গবাদি পশুপালক সংগঠনের আন্দ্রেয়াস আয়েবি বলেন, ‘গরুর শিং থাকবে কিনা, এমন বিষয় সংবিধানে স্থান পাবেÑ এটা হতে পারে না। আমাদের চারদিকে এই গরুগুলোকে দেখুন। তারা কত নীরব ও শান্ত। তাদের কোন অভাব আছে, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। আবার শিং যুক্ত গরুর আবির্ভাব ঘটলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে। তবে শিংয়ের কারণে আহত হওয়ার আশঙ্কার গল্পকে অমূলক বলে মনে করেন আরমিন। তিনি বরং নিজের গোয়ালের গল্প বলতে ভালবাসেন। তার মতে, গরুরা শিংয়ের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে। আরমিন জানেন, তিনি গরুর শিং কাটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করাতে পারবেন না। রসিকতা করে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে কিছু চাষি তার গোয়ালে আগুন ধরিয়ে দেবেন। বরং যে সব চাষি শিং কাটেন না, তাদের জন্য আর্থিক সাহায্য চান তিনি। কারণ শিং যুক্ত গরুদের গোয়ালে বেশি জায়গা লাগে। বিরোধীদের মতে, আরমিনের উদ্যোগের ফলে ৩ কোটি সুইস ফ্রাঁ ব্যয় হবে। সুইজারল্যান্ডে শিং নিয়ে এই বিবাদের মূলে রয়েছে ভিন্ন ধারার প্রকৃতিসম্মত কৃষি নীতি। আরমিন সেই নীতির পরিবর্তন চান। -ডয়েচেভেলে অবলম্বনে।
×