ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে আবারও দুইয়ে শেখ জামাল

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে আবারও দুইয়ে শেখ জামাল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তিন নম্বর দলের সঙ্গে এগার নম্বর দলের লড়াইয়ের ফল কি হতে পারে? নিশ্চয়ই জয়। তাই হয়েছে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে দিনের প্রথম খেলায় অনায়াস জয় কুড়িয়ে নেয় তিনবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড। তারা ৩-১ গোলে হারায় দু’বারের লীগ শিরোপাধারী বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া সংসদকে। ম্যাচের প্রথমার্ধে বিজয়ী দল এগিয়েছিল ২-০ গোলে। নিজেদের সপ্তদশ ম্যাচে এটা ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত জামালের দ্বাদশ জয়। ৪০ পয়েন্ট তাদের। ফলে ঢাকা আবাহনীকে (৩৯) তিনে ঠেলে আবারও দ্বিতীয় স্থানটি পুনরুদ্ধার করলো তারা। ৪২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে চট্টগ্রাম আবাহনী। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা ‘অল রেড’ খ্যাত মুক্তিযোদ্ধার দ্বাদশ হার। ১১ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান আগের মতোই, একাদশ (১২ দলের মধ্যে)। প্রথম লেগে মুক্তিযোদ্ধাকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল শেখ জামাল। শুক্রবার খেলার শুরুতে শেখ জামাল ৪-৩-৩ এবং মুক্তিযোদ্ধা ৪-১-৪- ফর্মেশনে খেলে। গত ম্যাচে আরামবাগের জালে গোলবন্যার সৃষ্টি করেছিল জামাল। জিতেছিল ৬-৪ গোলে। মুক্তিযোদ্ধা তো শক্তির বিচারে অনেক পিছিয়ে আরামবাগের চেয়ে। অথচ খেলা শুরুর প্রথম ১৯ মিনিট পর্যন্ত প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পায়নি বলটা ঢোকানোর জন্য। যদিও চেষ্টা করেছিল কয়েকবারই। কিন্তু সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। অবশেষে ২০ মিনিটে সফলতার মুখ দেখে শেখ জামাল। সতীর্থর কাছ থেকে বল পান জামালের ফরোয়ার্ড জাবেদ খান। ডি-বক্সের প্রায় গজ পাঁচেক দূর থেকে তিনি গোলপোস্ট লক্ষ্য করে আচমকা তীব্র উঁচু শট নেন। মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক আজাদ হোসেন ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। কিন্তু বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। পড়িমরি করে সেই বল ধরতে এগিয়ে আসেন আজাদ। কিন্তু পারলে তো! কেননা পেনাল্টি বক্সে যে পজিশন নিয়ে শিকারির মতো অপেক্ষা করছিলেন রাফায়েল ওদোভিন। নাইজিরিয়ান এই ফরোয়ার্ড সুযোগটি কাজে লাগালেন কড়ায়-গ-ায়। দৌড়ে এসে টোকা মেরে বল ঢুকিয়ে দিলেন জালে। আবারও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো আজাদের লম্ফঝম্ফ (১-০)। চলমান লীগে আগেই গোলদাতার শীর্ষে থাকা রাফায়েল নিজের গোলসংখ্যাকে আরেকটু বাড়িয়ে ১২তে উন্নীত করেন। ২৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ নষ্ট করে জামাল। সতীর্থ মিডফিল্ডার আলী হোসেনের কাছ থেকে থ্রু পাস পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে সামনে আব্বাস ইনুশাকে বাধা হিসেবে পান জামালের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড সলোমন কিং কানফর্ম। ইনুশাকে ডজ দিয়ে কাটিয়ে ডান পায়ে ত্বরিত গড়ানো শট নেন সলোমন। মুক্তির গোলরক্ষক আজাদ ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পাননি। না, এবার ভাগ্যবান আজাদ। কারণ বল চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৩১ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো মুক্তিযোদ্ধা। সতীর্থ মিডফিল্ডার রোহিত সরকারের কাছ থেকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ঠিক বাইরে বল পান অপর মিডফিল্ডার নাজমুল ইসলাম রাসেল। দেরি না করে বাঁ পায়ের যে শট নেন তা জামাল গোলরক্ষক সামিউল ইসলামকে প্রথমবারের মতো কঠিন পরীক্ষায় ফেলে। তবে শটটি পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে গেলে বেঁচে যায় জামাল। ৩৭ মিনিটে কর্নার পায় শেখ জামাল। ডিফেন্ডার খান মোঃ তারার উড়ন্ত কর্নার থেকে চমৎকার হেডে মুক্তির জালে বল পাঠিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন ফরোয়ার্ড নুরুল আবসার (২-০)। প্রথমার্ধে এই স্কোরলাইনেই বিরতিতে যায় উভয় দল। বিরতির পর নতুন উদ্যমে খেলতে নামে জামাল। ৫৩ মিনিটে আবারও গোল করে তারা। মুক্তির ডি-বক্সে রাফায়েল এবং সলোমন চমৎকার বোঝাপড়া করে বল আদান-প্রদান করেন। বক্সের ভেতর জটলার মধ্যে বাঁ পায়ের ফিনিশিং টাচটা দেন সেই রাফায়েলই (৩-০)। এই গোলে নিজের ব্যক্তিগত গোল ১৩তে নিয়ে যান রাফায়েল। লীগের চতুর্থ ও নিজের তৃতীয় হ্যাটট্রিক করার জন্য আরও অনেক সময় ছিল রাফায়েলের হাতে। কিন্তু এর দুই মিনিট পরই সবাইকে অবাক করে দিয়ে কোচ রক্সি মাঠ থেকে তুলে নেন রাফায়েলকে। বদলি হিসেবে নামান গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড মমোদৌ বাওকে। ৬১ মিনিটে এক গোল শোধ করে মুক্তিযোদ্ধা। জামালের ডি-বক্সের বাইরে ফরোয়ার্ড মনির আলম ডান পায়ে তীব্র গড়ানো শট নেন। তা ঠিকমতো গ্রিপ নিতে পারেননি জামাল গোলরক্ষক সামিউল। কাছেই দাঁড়ানো অপর বদলি ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম টোকা দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে (১-৩)। শেষ পর্যন্ত উভয়দল আর কোন গোল করতে পারেনি। ফলে ওই স্কোরলাইনেই খেলা শেষ হলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পাওয়ার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাহবুব হোসেন রক্সির শিষ্যরা।
×