ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসানচরে স্থানান্তরে জরিপ কাজ শুরু হচ্ছে

প্রত্যাবাসন নিয়ে অগ্রগতি নেই ॥ থামছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রত্যাবাসন নিয়ে অগ্রগতি নেই ॥ থামছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এখনও যেভাবে রোহিঙ্গারা দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে এবং এদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কোন ধরনের অগ্রগতি নেই তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে দেশের জন্য এ সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হবে। এমনিতেই আগে থেকেই ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশে। এর ওপর নতুন করে এসেছে আরও সাড়ে সাত লক্ষাধিক। এরইমধ্যে এদেশের মাটিতে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে আসছে নতুন নতুন শিশু সন্তান। এমনিতেই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মাঝে জন্মহারের সংখ্যায় আধিক্য রয়েছে। এদেশে অবস্থানকালে এ পরিস্থিতির কোন ব্যত্যয় হবে না বলে প্রতীয়মান। ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যা কী পরিমাণ হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসনসহ সচেতন সকল মহলে শঙ্কা জেগেছে। মিয়ানমার সরকার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব যতই এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করুক না কেন মিয়ানমার সরকার এ নিয়ে কোন ভ্রƒক্ষেপই করছে না। ফলে রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে চরম খাদ্যাভাব বিরাজ করছে। যার প্রধান শিকার হচ্ছে রোিহঙ্গারা। আর এ কারণে দলে দলে রোহিঙ্গারা চলে আসছে। শনিবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে নতুন রোহিঙ্গা এসেছে তিন শতাধিক। এদিকে শনি থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত যে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে এদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দিয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত জেলা জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রতিনিধি ও মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ওপারে মিয়ানমারের মংডু শহরের দংখালী এলাকায় এখনও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। দংখালিতে তারা ত্রিপল ও তাঁবু টেনে জীবনযাপন করছে। তবে খাদ্য সামগ্রী ও সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। এসব কারণে সেখানকার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে এখনও মরিয়া হয়ে আছে। টেকনাফের ইউএনও মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে গত ২৩ নবেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতার স্মারক সই হয়েছে। কিন্তু এরপরও রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা আগমন আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে ওপারের সূত্রগুলো বলেছে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা পল্লীগুলোতে এক ধরনের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অধিকার বলতে সেখানে বর্তমানে আগের তুলনায় অবশিষ্টটুকুও নেই। সবই হরণ করে নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। ফলে এদের গন্তব্য বাংলাদেশমুখী হয়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস করার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বসতি গড়ে তোলার জন্য যেমন বন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে কাঠ, বাঁশসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি। এদিকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা জানিয়েছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলে খুব দ্রুততম সময়ে পরিবেশের মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গত কারণে রোহিঙ্গাদের পাহাড় কাটা, বনজ সম্পদ ধ্বংস করার কাজ থেকে বিরত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাল্যবিবাহের হিড়িক ॥ উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত ১২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু-কিশোরীদের বাল্যবিবাহের হিড়িক পড়েছে। গত দুই মাস ধরে অসংখ্য বাল্যবিবাহ হয়েছে প্রতিটি ক্যাম্পে। বাংলাদেশে স্থায়ী হতে কিছু কিছু রোহিঙ্গা পরিবার তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী মেয়েদের তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশীদের হাতে।
×