ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং নদীর পানি দুই মাস আগেও ছিল স্বচ্ছ নীল। কিন্ত তারপর থেকেই সেই পানি হয়ে গেছে কর্দমাক্ত, ঘোলাটে ও কালো। নদীর পানি কেন কালো হয়ে যাচ্ছে তার সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। খবর এনডিটিভির।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কাকুট তায়েং (৮২) জানান, খুব সুন্দর ছিল এই নদী। চারপাশে ছিল অনেক মাছ। ১৯৪৭ সাল থেকেই শীতকালে নদীটিকে আরও ছড়িয়ে পড়তে দেখে আসছি। অথচ এবারের মতো কখনই এমন কালো পানি দেখিনি। জীবনভর অরুণাচলের এই নদীর পাশেই তিনি বসবাস করেন। অক্টোবর থেকে নদীটির পানির রং বদলাতে দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। সিয়াং নদীর উৎপত্তি ভারতে নয় বরং চীনে। চীনের ইয়ারলুং সাংপো নামে পরিচিত নদীটি শুমাতান পয়েন্ট দিয়ে ভারতের অরুণাচলে প্রবেশ করেছে। এখানে সিয়াং নাম নিয়ে এগিয়ে পাসিঘাটের পর থেকে প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র হিসেবে অসমের ভেতর দিয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
নদী সংশ্লিষ্ট অরুণাচলবাসীর ধারণা, নদীর পানির রং বদলানোর পেছনে চীনের হাত থাকতে পারে। কারও কারও মতে, একটি টানেল তৈরি করে দক্ষিণ তিব্বতের উয়ারলুং সাংপো থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের শুষ্ক তাকলামাকান মরুভূমিতে পানি সরবরাহ করার জন্য চীন সরকারের পরিকল্পনার ফলেই হয়ত নদীর পানির এই পরিবর্তন। কেউ কেউ বলছেন, তিব্বতের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সঙ্গে পানির রং বদলানোর কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ যাই হোক, নদীর পানির এই পরিবর্তন ভাবিয়ে তুলছে অরুণাচল ও অসম রাজ্য সরকারকে। পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় কেবল এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাণ-প্রতিবেশ ও বাস্তুসংস্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না পাশাপাশি আশঙ্কা বাড়ছে নদীটির ওপর নির্ভরশীল হাজারো মানুষের জীবিকা নিয়েও। বন্যপ্রাণী ও বাস্তুসংস্থান বিশেষজ্ঞ পি রিংস বলেন, এখন জেলেদের দেখা যাচ্ছে না।
জলজ জীবনও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তিন কিলোমিটার দূরে বন্যপ্রাণীদের একটি আশ্রয়স্থল ছিল। প্রতিবছর সেখানে পরিযায়ী পাখি দেখা যেত। এখন তাও দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয়তা প্রত্যাশা করছেন। অরুণাচল বিধানসভার সদস্য নিনং এরিং বলেন, চীন এখনও বলছে তারা কিছুই করছে না। ১৯৬২ সালেও চীন-ভারত ভাই ভাই স্লোগান তুলে আমাদের দিকে গুলি ছুড়েছিল। এখনও এমনই হচ্ছে। আমি চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়ে; তারা কি সত্যিই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নিয়ে ভাবছে।