ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিতে মধ্যপ্রাচ্য নেতৃবৃন্দের হুঁশিয়ারি

পরিণতি হবে ভয়াবহ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

পরিণতি হবে ভয়াবহ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেম সরিয়ে আনার কথাও বলেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাত দশকের পররাষ্ট্রনীতির একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। ইতোমধ্যেই কোন কোন দেশ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট। ট্রাম্প মঙ্গলবার ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেম সরিয়ে আনার কথা বলেন। জেরুজালেম এখনও পর্যন্ত ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃত নয়। কোন দেশেরই দূতাবাস সেখানে নেই। যুক্তরাষ্ট্র এতকাল পর্যন্ত শহরটির ওপর আইনগত অধিকারের কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। বরং ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে ব্যাহত নিরপেক্ষ ছিল। জেরুজালেমকে ইসরাইল বরাবর নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে এসেছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরাইল পূর্ব- জেরুজালেম দখল করে নেয়। ওই বছর সিরিয়া, মিসর ও জর্দানের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ হয়। এই দেশগুলোর দৃষ্টিতে জেরুজালেম একটি যৌথ নগরী যার ওপর তাদের সমান অধিকার রয়েছে। আরব দেশগুলো ২০০২ সালে যে শান্তি প্রক্রিয়া দিয়েছিল তা পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করার কথা বলা হয়েছিল। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াবে। এর মধ্যে কূটনৈতিক পরিকল্পনা নেই, কেবলমাত্র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষাই উদ্দেশ্য। ২০১৬ সালে ট্রাম্প উগ্র ডানপন্থী, রক্ষণশীল ও ইসরাইলপন্থী ইহুদিদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় যেতে পারলে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। মঙ্গলবার তার একজন উপদেষ্টা এটি নিশ্চিত করেছেন যে ট্রাম্প দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে আনছেন। তবে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নের জন্য কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। দূতাবাস সরিয়ে আনতে একটি বিলে সই করার জন্য সোমবার পর্যন্ত সময়সীমা ছিল। কিন্তু তিনি সে সময় অতিক্রম করে গেছেন। মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। ইসরাইলের সঙ্গে তাদের আলোচনায় বসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে কেবল আঞ্চলিক পর্যায়ে নয় বরং পুরো বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে। মঙ্গলবার ট্রাম্প তাকে ফোন করার পর আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা তার পক্ষ থেকে বিবৃতিটি প্রকাশ করেন। আব্বাসের এই উদ্বেগের কথা প্রতিধ্বনিত করে জর্দানের বাদশা আব্দুল্লাহও প্রায় একই ধরনের একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আরব ইসরাইল সংঘাত বন্ধে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেবে। বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জেরুজালেম। মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেম সরিয়ে আনার এ সিদ্ধান্ত মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টানদেরও ক্ষুব্ধ করবে বলে বাদশাহ আব্দুল্লাহ মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে আব্বাসের সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়। মিসরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আলসিসিও বলেছেন এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যাহত করবে। সিসির দফতর থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘ প্রস্তাবে জেরুজালেমের যে আইনগত মর্যাদা দেয়া মিসর সেটি সমর্থন করে। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের কথা হয়েছে। সালমানও ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে জেরুজালেম নিয়ে সীমা ছাড়িয়ে না যাওয়ার জন্য ট্রাম্পকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে তিনি বলেন, ‘জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য একটি চূড়ান্ত সীমা রেখা। এই সীমা অতিক্রম করে গেলে তারা ধৈর্য ধরে বসে থাকবে না।’
×