ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘উইনেবল’ ক্যান্ডিডেট দেবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকা উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘উইনেবল’ ক্যান্ডিডেট দেবে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে ‘উইনেবল’ ক্যান্ডিডেট দেবে আওয়ামী লীগ। ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোন তোড়জোড় নেই। নিয়ম অনুযায়ী, ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ কোন ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করেনি। আর এটা আওয়ামী লীগের বিষয়ও না। নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুযায়ী নির্বাচন হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগী দেখে বের হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ইডেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের অসুস্থ ছাত্রী আঁখি মনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তার শারীরিক সর্বশেষ অবস্থার খোঁজখবর নিতেই হাসপাতালে যান তিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির হয়ত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেই, তাই তারা নানা ধরনের কথা বলছে। তবে এই নির্বাচনে জেতার জন্য আওয়ামী লীগ ‘উইনেবল’ ক্যান্ডিডেট দেবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) কখন যে কী বলে তার ঠিক নেই। একবার বলে যেকোন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাবে। আবার বলে খালেদা জিয়ার সাজা হলে যাবে না। তাদের কোন বক্তব্যটা সঠিক ? সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা আসলে কখন যে কি বলে, এটা কেবল তারা জানে। কেউ বলে যে কোন পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচনে যাবে। আবার বেগম জিয়ার যদি সাজা হয় তবে নির্বাচনে যাবে না- এমন কথাও তাদের কোন কোন নেতা বলে থাকে। আমার প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন, বিএনপি নেতাদের কোন্ কথাটা সঠিক ? যে কোন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাবে, না বেগম জিয়ার সাজা হলে যাবে না। সাজা হলে তো আদালত দেবে, আর এই মামলা তো ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের সময়ের। এই মামলা করার সঙ্গে তো আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। এই সরকারের কোন সম্পর্ক নেই।’ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার সাজাতো সরকার বা আওয়ামী লীগ দেবে না। এটা আদালতের ব্যাপার। আর নিম্ন আদালতে সাজা হলে তো উচ্চ আদালত আছে। আপীল করার সুযোগ আছে, রিভিউও করতে পারবেন। দুর্নীতির বিচারাধীন দুই মামলায় বারবার সময় নেয়ার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সন আদালতে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ করেন সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ঠিক আছে এটা আদালত যদি তাকে সুযোগ দেয়, আমাদের কিছু বলার নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে যে রকম নির্বাচন হয়েছে তা আওয়ামী লীগও চায়নি মন্তব্য করে ওবাযদুল কাদের বলেন, ‘আজকে এটা শুনতে হয় যে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এত জন নির্বাচিত হয়েছে। এটাতো আমরা চাইনি। তিনি বলেন, নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আর নির্বাচন তারাও (বিএনপি) চায়, আমরাও চাই। আমি অনেক বার বলেছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আমরা চাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন চাই না। যেটা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হয়েছে। তাহলে আজকাল ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত’ এটি শুনতে হত না। তখন আমরা চেয়েছি তারাও আসুক। আমাদের নেত্রী তাদের গণভবনেও ডেকেছেন। তারা হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে দিয়েছে। এতে গণতন্ত্রের কি দোষ ? প্রশ্ন রাখেন ওবায়দুর কাদের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় স্থানীয় জনগণের থেকে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। এ কারণে স্থানীয়দের উদ্বেগ বেড়েছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের বিষয়টা যতই বিলম্বিত হচ্ছে, স্থানীয় জনগণ ততই ধৈর্যহারা হচ্ছে। জনগণ আর ধৈর্য ধরতে পারছে না। তাদের ট্রলারেবল লেভেল অতিক্রম করে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা বিকল্প কিছু কিছু ব্যবস্থা করে রাখছি। যুক্তফ্রন্ট রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ॥ এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন জোট গঠন প্রসঙ্গে বলেন, নতুন এই জোটকে স্বাগত জানাই। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তিনি বলেন, নতুন জোট যুক্তফ্রন্ট রাজনীতির নতুন মেরুকরণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন অনেক জোট, রাজনৈতিক নানা মেরুকরণ হবে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শামসুন্নাহার চাঁপা, দেলোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া, এস এম কামাল হোসেন, এ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনুন- সরকারকে ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাখা জিয়া পরিবারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন তিন নেতার মাজারে জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের উদ্যোগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সামসুল হক টুকু এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সৌদি আরবে দুর্নীতির তদন্তে সেই দেশসহ বিশ্বের বারোটি দেশে জিয়া পরিবারের সম্পদের হিসেবে বেরিয়ে এসেছে। বিশ্ব গণমাধ্যমসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশী গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় বিএনপির নেতারা চুপসে গেছেন। এ বিষয়ে তারা কোন কথা বলছেন না। কারণ বিদেশী তদন্তে সরকারের কোন হাত নেই। তিনি বলেন, রাজনীতি এখন আর দেশের মানুষের সেবা করার ব্রত হিসেবে নেই। রাজনীতি এখন অনেকের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভের সোপান এবং বিত্ত-বৈভব অর্জনের মাধ্যম। আর এজন্য দেশের সামরিক শাসকরাই দায়ী। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের প্রতীক বিএনপি নেতা তারেক রহমান। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি হাওয়া ভবনকে সরকারের সমান্তরাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।
×