ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভৈরবে ডাকাত প্রতিরোধে লাঠি-বঁটি নিয়ে ঘুম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

ভৈরবে ডাকাত প্রতিরোধে লাঠি-বঁটি নিয়ে ঘুম

নিজস্ব সংবাদদাতা,ভৈরব,৩ ডিসেম্বর ॥ বিধবা নারী নূর জাহান বেগম। সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সদস্য। নূর জাহান রাতে ঘুমানোর সময় দরজার পাশে দুটি লাঠি রেখে বিছানায় যান। আরেক নারী রাবেয়া বেগম। তিনিও ঘুমানোর সময় বালিশের কাছে বঁটি, দা নিয়ে ঘুমান। কারণ একটাই, কখন জানি বাড়িতে ডাকাত ঢুকে পড়ে। দিন শেষে রাত নেমে এলেই এমন আতঙ্ক সবার মনে তাড়া করছে। নিত্যদিনের এই চিত্র শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপর গ্রামের। গেল কয়েক দিন ধরে ‘ডাকাত’ আতঙ্কে দিন যাপন করছে উপজেলার শম্ভুপুর, শিবপুর ও কালিকা প্রাসাদসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। এতে নিজ বাড়ি-ঘরে বসবাসে চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হাজারো মানুষ। শহর কিংবা গ্রাম এলাকার কোথাও না কোথাও চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আজ এই এলাকায় তো কাল অন্য এলাকায়। তাই ডাকাতদের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেক এলাকায় নিজেরাই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিত্তবানদের কেউ কেউ আবার বাড়িতে সিসি ক্যামেরাও লাগিয়েছেন। এরপরও তাদের কিছুতেই যেন ভয় কাটছে না। এলাকায় ডাকাত প্রতিরোধে শম্ভুপুর গ্রামের বড় কান্দায় ১২ পাহারাদার নিয়োগ করেছেন এলাকাবাসী। রাত ১০টার পর থেকে মুখে বাঁশি, কাঁধে লাঠি ও হাতে টর্চলাইট নিয়ে ‘হু-শি-য়া-র, সা-ব-ধা-ন’ বলে তারা এলাকা পাহারা দিচ্ছেন। তেমনি পাশের ইটালী পাড়াতেও ৮জন ও কালিকা প্রাসাদের আদর্শ পাড়ায় ২০ পাহারাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয়রা। শম্ভুপুর বড় কান্দার পাহারাদারদের দলনেতা সাবেক ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন বলেন, পাহারাদাররা গ্রামে ডাকাত ঢোকার খবর পেলে মসজিদের ইমাম সাহেবকে ফোনে জানিয়ে দেবে। আর সেই সংবাদ মাইকে ঘোষণা দেবেন তিনি। বাকিটা সামাল দেব আমরা। গত মঙ্গলবার রাতে কালিকাপ্রাসাদের গাজীরটেকের বাসিন্দা মৎস্যজীবী মিস্টু মিয়ার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। তারা যাবার পথে গোয়ালঘর থেকে একটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের গাভী নিয়ে যায়। এর দাম প্রায় ১ লাখ টাকা হবে বলে জানান মিস্টু মিয়ার স্ত্রী কল্পনা বেগম। এর ৪ দিন আগে শম্ভুপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া হাজী মুন্তাজ মিয়ার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। বিষয়টি এলাকার মসজিদে মাইকিং করা হলে লোকজন লাঠিসোঠা, দা ও বল্লম নিয়ে ঘর থেকে বের হলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পরদিন ফের ডাকাতরা হানা দিলে আবার এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কালিকাপ্রাসাদের নয়াহাটির মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আলমগীরের বাসায় ডাকাতরা তার পরিবারের লোকজনের হাত-পা বেঁেধ একটি টেলিভিশন, টাকাসহ স্বর্ণলঙ্কার লুটে নেয়। ডাকাতরা প্রায় ২ লাখ টাকার মাল লুটে নেয় বলে দাবি আলমগীরের। এদিকে শহরের নিউ টাউনে সম্প্রতি সেলিম ভবনের ৫ম তলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, ১০ থেকে ১২জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলযোগে এলাকায় প্রবেশ করে একের পর এক অপরাধ কর্মকান্ড- সংঘটিত করছে। হঠাৎ চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক মহলসহ সুশীল সমাজকে ভাবিয়ে তুলছে। এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি ঘটনা ঘটতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
×