ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচারে নানা কৌশল নিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা ॥ কদর বাড়ছে নেতাকর্মীদের

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

প্রচারে নানা কৌশল নিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা ॥ কদর বাড়ছে নেতাকর্মীদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৮ নবেম্বর ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা প্রার্থী পছন্দ করার ক্ষেত্রে নানা বিষয় সামনে নিয়ে আসছেন। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সদ্য বিগত মেয়র এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় তার ৫ বছর মেয়াদের উন্নয়নের হিসাব-নিকাশ প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে অভিযোগের সুরে বলেন নগরীর যানজট, সড়কের বেহাল দশা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদ্যুত সুবিধার অভাব, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, সড়কের ফুটপাথ দখলসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। অথচ ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর তারা অনেক আশা নিয়ে নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে। ৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ড ছিল। এখন সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ২০৩.৬ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড ৩৩টি। এর মধ্যে ১ থেকে ৬নং ওয়ার্ড ও ২৮ থেকে ৩৩নং ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই করুণ। যে ৭টি ইউনিয়ন ও দুটি ইউনিয়নের আংশিক সিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সে এলাকারও কোন উন্নয়ন হয়নি। বিশাল এলাকাজুড়ে সিটি কর্পোরেশন গঠন হলেও বর্ধিত অংশে এখনও রয়েছে পল্লী বিদ্যুত। সিটিতে তারা বসবাস করলেও বর্ধিত এলাকার বাসিন্দাকে পল্লী বিদ্যুত ব্যবহার করতে হয়। ফলে তাদের বিদ্যুত বিলে ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা বেশি দিতে হচ্ছে। সিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সরকারী নানা সাহায্য থেকে তারা বঞ্চিত। নাগরিক সুবিধা না বাড়লেও কর বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া নগরীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক কাঁচা। এ ব্যাপারে সাবেক রসিক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, তার আমলে রংপুর মহানগরের ২৯৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। নগরীর রাস্তা, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে স্বস্তি এনে দিয়েছে। উন্নয়নের চেষ্টা ছিল, কিন্তু শতভাগ সফল হতে পারিনি। আগামীতে নির্বাচিত হলে সব ওয়ার্ডের উন্নয়ন করা হবে। এত বড় সিটির উন্নয়ন ৫ বছরে সম্ভব নয়। তবে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে নগরবাসী তাকেই নির্বাচিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অপরদিকে, বিগত মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে আবারও নির্বাচিত করার পক্ষে জোরালো মতামত দিচ্ছেন অনেকে। তাদের বক্তব্য আ.লীগ ক্ষমতায় আছে। নগরের উন্নয়ন করতে হলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন আছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন তা সম্পন্ন করতে তাকেই দরকার বলে মনে করেন ভোটারের কেউ কেউ। এদিকে, নির্বাচনে জিততে নানামুখী কৌশল বেছে নিয়েছে বিএনপি। তারা দলীয় ও ব্যক্তিগত সমর্থক ছাড়াও যেসব দলের প্রার্থী নেই তাদের ভোট টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে। শুধু প্রার্থী নন, বিএনপি নেতারাও জামায়াতের ভোট তাদের পক্ষে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে আলোচনা হচ্ছে । জামায়াত নেতারাও বলেছেন, তাদের ভোট বিএনপি প্রার্থী পাবেন। তারা গোপনে ওই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। এ কৌশল সফল হলে নির্বাচনে ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে তারা মনে করেন। জামায়াত নেতারাও বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবেও আমরা মেয়র পদে কোন প্রার্থী দিইনি। আমাদের ভোট রয়েছে ৫০ হাজার। এ ভোট বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলাই পাবেন। গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচন করে বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। এবারে দলীয় প্রতীকে ভোট করার কারণে এই ভোট অনেক বাড়বে। ফলে ২০ দলীয় জোটের সম্মিলিত ভোটে তিনি জয়ী হবেন। এ ব্যাপারে কাওসার জামান বাবলা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তার কোন কথা হয়নি। তিনি বলেন, জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মী আমার সঙ্গে রয়েছেন। তারাও দিন-রাত প্রচার চালাচ্ছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কদর বাড়ছে নেতাকর্মীদের ॥ রসিক নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থীসহ বড় নেতাদের কাছে তাদের নিজ দলের সাধারণ নেতাকর্মীর কদর বাড়ছে। নেতারা যোগাযোগ বাড়িয়েছেন কর্মীর সঙ্গে। ফোন দিচ্ছেন। কোথায়ও দেখা হলে হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। ব্যক্তিগত এই যোগাযোগের পাশাপাশি দলীয় ব্যানারে সভা করে নেতাকর্মীর মতামত-পরামর্শ নিচ্ছেন, সমর্থন-সহযোগিতা চাচ্ছেন। এ সবই কর্মীর সঙ্গে নিজের দূরত্ব ঘোচানোর, স¤পর্ককে ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা। সময় যত গড়াবে এ চেষ্টা হয়ত আরও বাড়বে। দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হওয়ায় এবার মেয়র পদপ্রার্থীদের কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। আগের নির্বাচনগুলোতে মেয়র পদপ্রার্থীরা সর্বদলীয় ভোটের আশায় নিজের দলীয় পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তি পরিচয় এবং কৃতিত্বকে প্রচার করার চেষ্টা করতেন। নিজের দলীয় পরিচয়কে আড়াল করে দলের উর্ধে সকল নাগরিকের নেতা হয়ে ভোটের লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার একটা চেষ্টা দেখা যেত। ভোটে জয়লাভের এ কৌশল এবার কোন কাজে লাগবে না। দলীয় প্রতীকই সব খোলাসা করে দেবে। সেটা মাথায় রেখেই মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী কর্মতৎরতা শুরু হয়েছে। রংপুরের নেতাকর্মীর কাছে দলের আপনজন হয়ে ওঠার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে লবিং বাড়িয়ে বিজয় নিশ্চিত করা এখন তাদের সামনে প্রধান লক্ষ্য। দলীয় মনোনয়নে মেয়র পদে প্রার্থীকে বিজয়ী করতে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও মাঠে নামতে শুরু করেছেন। বাবলার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন ॥ ঋণ খেলাপের অভিযোগে রসিক নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানিয়ে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপীল দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার আপীলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ১০ এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারে কাছে আপীল করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে রসিক নির্বাচনে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের পক্ষে আপীল দায়ের করা হয়। শুধু বিএনপি প্রার্থী বাবলার মনোনয়নপত্র বাতিল করার আবেদন জানিয়ে সোনালী ব্যাংক রংপুরের পক্ষে আপীল আবেদন দায়ের করা হয়।
×