ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক

কর ও ভ্যাটে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে প্রণীত হচ্ছে নতুন বাজেট

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

কর ও ভ্যাটে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে প্রণীত হচ্ছে নতুন বাজেট

এম শাহজাহান ॥ দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। জনগণের উপর করের বোঝা না চাপিয়ে বড় এই বাজেট দেয়ার কৌশল নির্ধারণ করছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে রবিবার সচিবালয়ে ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির প্রথম সভা হয়। ওই সময় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার, রাজস্ব সংগ্রহ, রাজস্ব ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ও বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া গত অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পর্যালোচনা, চলতি বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া আগামী অর্থবছরের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রাথমিক সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়সীমা নির্ধারণ এবং ২০১৯-২০ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রণয়ন বিষয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ওই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। এজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটার আকর্ষণে এবার কর ও ভ্যাটে বড় ধরনের ছাড় দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। তবে রাজস্ব আদায়ে করের আওতা বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে বেশিসংখ্যক মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে কর এবং ভ্যাটের আওতায় এনে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে ভ্যাটের হার অপরিবর্তিত থাকছে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে। বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ার‌্যমান ড. নজিবর রহমান, স্থানীয় সরকার সচিবসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও বরাবরের ন্যায় ছয়টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুত, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজন প্রকল্প, সরকারী সেবা প্রদানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বর্হিবিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার ও প্রবাস আয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান। এই ছয় খাতের ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হলে রূপকল্প-২১ এবং ভিশন-২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আগামী বাজেটে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে তা হচ্ছে-চল্লিশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেট রিপোর্ট প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও এ সংক্রান্ত নতুন ধারণাপত্র প্রণয়ন এবং শিশু বাজেট ও ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা হালানাগাদ করা। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্পের জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ১০টি মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দিচ্ছে সরকার। এ কারণে বাজেটে যেসব কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী বাজেট নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা করা হতে পারে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। করদাতার সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে সরকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই বাজেটের আকার বাড়িয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ৪০ বছর বয়সী করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া দেশের জন্য ভাল লক্ষণ। এছাড়া তরুণরা কর দিতে উৎসাহিত হচ্ছে। কর আদায়কারীরা আরও বেশি করবান্ধব হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে।
×