ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে জিদানের লাশ উদ্ধারের ২ দিন পর র‌্যাবের হাতে আটক হলো বকর

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মাদ্রাসাছাত্র জিদানকে খুন করে আবু বকর

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মাদ্রাসাছাত্র জিদানকে খুন করে আবু বকর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র দুই দিন পরেই ঢাকার গুলিস্তানে মাদ্রাসার ভেতরে ছাত্র হত্যাকারী আবু বক্করকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। আবু বক্কর হত্যায় দায় স্বীকার করেছে। অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনসহ ‘সিনিয়রের’ হুকুম পালন করতে রাজি না হওয়ায় মাদ্রাসা ছাত্র জিহাদকে হত্যা করে আবু বক্কর। গত ২০ নবেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার ভেতরের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে জিদান ওরফে আব্দুর রহমান (১২) নামে এক ছাত্রের গলা কাটা লাশ উদ্ধার হয়। জিহাদ মাদ্রাসাটিতে চার বছর ধরে হেফজ বিভাগের আবাসিক ছাত্র হিসেবে পড়ালেখা করছিল। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় নিহতের পিতা মোঃ হাফেজ উদ্দিন (৬৫) বাদী হয়ে পলাতক মাদ্রাসা ছাত্র আবু বক্করকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জিহাদের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার জালেশ্বর গ্রামে। বুধবার র‌্যাব-৩ এর একটি দল সকাল নয়টার দিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে আসামি মোঃ আবু বক্করকে (১৬) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তার পিতার নাম মৃত তাহের শিকদার। বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানাধীন কালিকাপুরের শিকদার বাড়ি গ্রামে। বুধবার বিকেল পাঁচটায় কাওরানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ এমরানুল হাসান জানান, আবু বক্কর ও জিদান মাদ্রাসাটিতে হেফজ বিভাগের আবাসিক ছাত্র। আবু বক্কর এ মাদ্রাসায় পড়ার আগে দুই বছর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার মাদ্রাসায় পড়েছে। সে সিনিয়র ছাত্র হিসেবে জিদানকে মাঝে মধ্যেই কাপড় কাচা, খাবার আনানেয়াসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজের হুকুম দিত। জিদান অনেক সময়ই আবু বক্করের কথা মানত না। এ নিয়ে আবু বক্কর জিদানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। এছাড়া আবু বক্কর অনেক দিন ধরেই জিদানকে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তাতে রাজি ছিল না জিদান। সম্প্রতি জিদানের সঙ্গে আব্দুর রহমান নামে এক ছাত্রের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবু বক্করের ধারণা, জিদানের সঙ্গে আব্দুর রহমানের গভীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এমন ধারণা থেকেই গত ১৬ নবেম্বর আবু বক্কর উত্তেজিত হয়ে জিদানকে মারধর করে। বিষয়টির বিচার করেন মাদ্রাসাটির শিক্ষক মোঃ ইয়াছিন। এ ঘটনার পরেও জিদান আব্দুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে ঘোরাফেরা করায় আবু বক্করের মনে আরও জিদ চেপে বসে। আবু বক্কর মনে মনে জিদানকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আবু বক্কর গত ১৯ নবেম্বর এশার নামাজের পর তার ফল কাটার ছুরিটি ধার দেয়। রাত দশটার পর রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়ে। রাত দেড়টার দিকে আবু বক্কর তার ছুরিটি ট্রাংক থেকে বের করে নিয়ে জিদানের বিছানার পাশে যায়। দেখে জিদান ঘুমিয়ে আছে। এরপর জিদানের মুখ চেপে ধরে প্রথমেই তার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। প্রথম পোঁচেই গলার রগ কেটে যায়। জিদান গোঙড়াতে থাকে। এরপর আবার মুখ চেপে ধরে আরেক পোঁচ দিয়ে পুরো গলা কেটে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আবু বক্কর কোলে করে জিদানের লাশ মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাঙ্কের কাছে নিয়ে যায়। ট্যাঙ্কে লাশ ফেলে সে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় মাদ্রাসার ওই রুমে অন্তত ৩৫ ছাত্র ঘুমিয়ে ছিল। আবু বক্কর বলেছে, ধস্তাধস্তি ও গোঙ্গানীর শব্দে দু’একজন ছাত্র জেগেছিল। তবে মশারির ভেতরে হত্যা করায় জেগে যাওয়া ছাত্ররা মশারির ভেতরে থেকে আরেকটি মশারির ভেতরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি স্পষ্টভাবে দেখতে পারেনি। টের পেলেও তারা হয়ত ভয়ে কিছু বলেনি। পরবর্তীতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা রক্তের দাগ দেখে দেখে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আবু বক্কর ইতিপূর্বে আর কোন মাদ্রাসা ছাত্রের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল কিনা তা জানা যায়নি। আবু বক্করের মাদকাসক্ত হওয়ার কোন তথ্য মেলেনি। ইতিপূর্বে আবু বক্কর আরও কোন অপরাধ করেছে কিনা, সে সম্পর্কেও কোন তথ্য মেলেনি।
×