ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গেইল-ম্যাককালাম ব্যাটিং ঝড়ে জয়ে ফিরল রংপুর

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ নভেম্বর ২০১৭

গেইল-ম্যাককালাম ব্যাটিং ঝড়ে জয়ে ফিরল রংপুর

মোঃ মামুন রশীদ ॥ প্রাকৃতিক ঝড়ে মানুষের সীমাহীন ভীতি আর শঙ্কা। কিন্তু কিছু ঝড় থাকে প্রত্যাশিত। বহুল আকাক্সিক্ষত সেই ঝড়টা অবশেষে সোমবার সন্ধ্যায় হানা দিল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিধ্বংসী ক্রিস গেইল আর মারকুটে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের তান্ডবে কেঁপে উঠল দর্শকরা শোরগোলে। খুব বেশিক্ষণ তাদের ব্যাটিং ঝড় স্থায়িত্ব না পেলেও ৮.৪ ওভারে রংপুর রাইডার্স পেয়েছে ৮০ রান! আর এতেই ভাগ্য বদলেছে হ্যাটট্রিক পরাজয় দেখা দলটির। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর সিলেট সিক্সার্সের বিরুদ্ধে তারা জয় তুলে নিয়েছে ৭ রানে। গেইল-ম্যাককালাম ঝড়ের পর ৭ উইকেটে ১৬৯ রান তুলেছিল রংপুর। জবাবে সিলেট ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬২ রান করতে সক্ষম হয়। পরিতৃপ্ত দর্শকরা স্বস্তির ঢেঁকুর তুলেই ঘরে ফিরেছেন। এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে দুরন্ত ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৪ উইকেটে হারিয়ে টানা পঞ্চম জয় তুলে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ঢাকাকে হটিয়ে চলতি বিপিএলের পয়েন্ট টেবিলে কুমিল্লা উঠে গেছে শীর্ষে ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে। ৭ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ঢাকা। রবিবার প্রচুর দর্শকের ঢল নেমেছিল দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুরে। সবাই এসেছিলেন গেইল-ম্যাককালামের ব্যাটিং বিস্ফোরণ দেখতে। গেইল-ম্যাককালাম যখন ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামেন তারা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন। হতাশায় দর্শকরা মাঠ ছাড়েন খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই। তবে সোমবার তাদের হতাশ হতে হয়নি, সিলেট টস জিতলেও রংপুরকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। তারপর বহুল আকাক্সিক্ষত ঝড়টা আছড়ে পড়ল। গেইল-ম্যাককালামের ব্যাট হয়ে উঠল শাণিয়ে নেয়া তরবারি! আর তাতে কচুকাটা হতে শুরু করল সিলেটের বোলারদের সব আক্রমণ। মাত্র ৮.৪ ওভারেই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ত্রাসোদ্দীপক ব্যাটসম্যানরা ঝড়ের গতিতে তুলে আনলেন ৮০ রান। এরপর ম্যাককালামকেই আগে থামতে হয়েছে সিলেটের অধিনায়ক নাসির হোসেনের ঘূর্ণিতে। ২১ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৩৩ রান করে ফিরে যান তিনি। পেসার আবুল হাসান রাজু ইনিংসের একাদশ ওভারে প্রথম বল করতে এসেই সবচেয়ে বড় স্বস্তি এনে দেন সিলেটের তাঁবুতে। ফিরিয়ে দেন গেইলকে সরাসরি বোল্ড করে। তখন সবেমাত্র অগ্নিমূর্তি ধারণ করে সব আক্রমণকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে শুরু করেছিলেন গেইল। তিনি ৩৯ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫০ রান করেন। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের ২১ বলে ২ চারে ২৫ এবং রবি বোপারার ১২ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় করা ২৮ রানে ৭ উইকেটে ১৬৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় রংপুর। চলতি আসরে এটিই তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আবুল হাসান নেন ২ উইকেট। জবাব দিতে নেমে মাত্র ২৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে সিলেট। এরপর সাব্বির রহমান ও নাসির হাল ধরেন। তারা দারুণ ব্যাট চালিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে। সাব্বির চলতি আসরে প্রথম অর্ধশতক আদায় করেন। তবে ১৭তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে মাত্র ২ রান দিয়ে সিলেটকে আবার চাপে ফেলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। পরের ওভারে চাপ কাটাতে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ম্যাককালামের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি ৪৯ বলে ৭ চার, ২ ছক্কায় ৭০ রান করে। তবে নাসির লড়াই চালিয়ে যান। ৪৩ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ৫০ রান করে অপরাজিত থাকেন। তবে তিনি জয় এনে দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬২ রান করতে সক্ষম হয় সিলেট। দিনের প্রথম ম্যাচে শহীদ আফ্রিদিকে ছাড়াই মাঠে নেমে সুনিল নারাইনের ৪৫ বলে ৭৬ রানের (৭ চার, ৫ ছয়) দুর্ধর্ষ ইনিংসের পরও ১৮.৩ ওভারে ১২৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল। কুমার সাঙ্গাকারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ বলে ২৮ রান করেন। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে পাকিস্তানী পেসার হাসান আলী ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চলতি বিপিএলের সেরা নৈপুণ্য দেখান। ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। জবাবে দলীয় ২৩ রানে দুটি এবং ১০৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে কুমিল্লা। কিন্তু শোয়েব মালিক ৫৩ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের টানা পঞ্চম জয় তুলে আনেন। ১৯.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১২৯ রান তুলে ৪ উইকেটের জয় নিয়ে শীর্ষস্থানে উঠে আসে কুমিল্লা। ইমরুল কায়েস ২০, তামিম ইকবাল ১৮ রান করেন। ২টি করে উইকেট নেন নারাইন ও মোহাম্মদ আমির। স্কোর ॥ রংপুর রাইডার্স ইনিংস- ১৬৯/৭; ২০ ওভার (গেইল ৫০, ম্যাককালাম ৩৩, বোপারা ২৮, মিঠুন ২৫; রাজু ২/২৪)। সিলেট সিক্সার্স ইনিংস- ১৬২/৪; ২০ ওভার (সাব্বির ৭০, নাসির ৫০*, ব্রেসনান ১২*; গাজী ১/৬, মাশরাফি ১/১৮)। ফল ॥ রংপুর রাইডার্স ৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ক্রিস গেইল (রংপুর রাইডার্স)।
×