ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সালমা নাসরীন এনডিসি

অনিশ্চিত বাজারে বিনিয়োগের ফর্মুলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

অনিশ্চিত বাজারে বিনিয়োগের ফর্মুলা

আমাদের দেশের শেয়ার বাজার এখনও অতটা মৌলভিত্তির ওপর গড়ে উঠেনি। শেয়ার বাজারে ভাল শেয়ারের সংখ্যা যেমন কম তেমনি শেয়ার বাজার এখনও গুজব ও বিভিন্ন সংগঠিত চক্রের প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে দুটি মহাবুদবুদের শিকার হয়ে লাখো বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। এখন দেখা যাক এরকম একটি বাজারে এক ব্যক্তি কি কি মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করলে বিনিয়োগ করে ঠকবেন না। বিনিয়োগকারীর চিন্তা চেতনাকে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাকে এভাবে নির্ধারণ করতে হবে যে সে বিনিয়োগের ফল লাভ করবে ক্রমান্বয়ে, এক লাফে নয়। কেউ বিনিয়োগের মাধ্যমে এক রাতে ধনী হতে পারে না। যদি কেউ হয়ে থাকে তাহলে অচিরেই তার ধন সম্পদ সে হারাবে নিঃসন্দেহে। তার বিনিয়োগ কখনও এক মাসে দ্বিগুণ হবে না এটা ধরে নিয়েই এগুতে হবে। ছোট অঙ্কের বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করলে মূলধন হারালেও তেমন বেদনা থাকবে না। যে সেক্টরটি সম্পর্কে বিনিয়োগকারী জানেন না সে সেক্টরে কখনও বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। কারণ সেক্টর সম্পর্কিত স্বচ্ছ ধারণার অভাব থাকলে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কেও আগে থেকে সচেতন হওয়া সম্ভব নয়। বিনিয়োগ করার আগে সেক্টর স্টাডি করতে হবে। এরপরও যদি বোঝা না যায় তাহলে ওই বিনিয়োগ স্কিপ করে যেতে হবে। সব ডিম একটি বাস্কেটে রাখা ঠিক নয়। অর্থাৎ সমুদয় অর্থ একটি মাত্র ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা সমীচীন নয়। তাহলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। প্রচলিত ধারার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার দরকার নেই। যে সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায় সেটার পেছনে ছুটে কোন লাভ নেই। ওটা গ্যাম্বিলিং, ওটা বিনিয়োগ নয়। সেই স্টক কেনা ঠিক নয় যেটার দরপতন ঘটেছে। যেটার দাম উর্ধগামী সেটাই কিনতে হবে, সেখানেই বিনিয়োগ করতে হবে এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কিন্তু কীভাবে? এক্সিট স্ট্রাটিজি বা কৌশল অবলম্বন করে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কোন এক্সিট পলিসি থাকে না। পক্ষান্তরে একজন সফল বিনিয়োগকারীর একাধিক এক্সিট কৌশল থাকে। অনেকেই স্টক কিনেন কিন্তু সঠিক সময়ে বিক্রি করতে পারেন না। একজন সফল বিনিয়োগকারী দুটো বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দেন, (১) এ স্মার্ট এন্ট্রি (২) এ স্মার্ট এক্সিট। মনে সন্দেহ থাকলে সে সেক্টরে বিনিয়োগ না করাই যুক্তিযুক্ত। বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই গবেষণা করতে হবে। একজন উচ্চতর সফল বিনিয়োগকারীকে নিম্নোক্তভাবে বিনিয়োগ করতে হবে: বিনিয়োগকারীকে মুনাফা এবং ক্ষতি উভয় দায়িত্বই নিজেকে বহন করতে হবে। বিনিয়োগকারীর ফিন্যান্সিয়াল ডেসটিনি বিনিয়োগকারীকেই ঠিক করতে হবে। এ বিষয়টি ঠিক করতে গিয়ে তার দক্ষতা বাড়বে এবং বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হবে। একজন সফল বিনিয়োগকারীর ইন- ডেপ্থ অবজেকটিভ থাকবে। তার পরিষ্কার ও সুনির্ধারিত লক্ষ্য থাকবে। ভাসা ভাসা কোন গোল নয়, তাকে জানতে হবে কেন তিনি বিনিয়োগ করছেন। তিনি যদি উদ্দেশ্য জানেন তবে রিটার্নও অনুমান করতে পারবেন, এমনকি রিস্ক কতটুকু তাও আন্দাজ করতে পারবেন। একজন সফল বিনিয়োগকারী কখনও ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না। সে প্রস্তুত থাকে। তার এক্সিট পলিসি থাকে। সে জানে তার ঝুঁকি হচ্ছে তার চ্যালেঞ্জ। লস হচ্ছে একজন ইনভেস্টরের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। লসটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে তিনি সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। একজন সফল বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকতে হবে। ভয় এবং লোভের উর্ধে উঠতে পারলেই বিনিয়োগে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। বিনিয়োগকারীকে মার্কেট টাইপ বা বাজারের ধরন যাচাই করতে হবে। বর্তমান বাজার কি রকম এবং বিনিয়োগকারী তার কৌশলের সঙ্গে কিভাবে এক্সিসটিং বাজারের সমন্বয় করবেন সেটার ওপরে নির্ভর করবে তার বিনিয়োগের সাফল্য। আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে কোন আইডিয়া মাথায় এলেই হুট করে বিনিয়োগ করা যাবে না। সবশেষে বলা যায় যে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া হচ্ছে অপরিহার্য যেটাকে ইতোপূর্বে ‘ফলি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আসলে কেবল যারা ঘুমিয়ে থাকে মরা নদীর মতো অচল হয়ে অথবা বদ্ধ জলাশয়ের মতো স্থবির হয়ে, তারাই কোন ভুল করে না। অর্থাৎ তাদের কোন ভুল হয় না। কারণ তারা তো জীবিত থেকেও মৃত ও স্থবির। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি ভুল হচ্ছে একজন বিনিয়োগকারীর জন্য সবচেয়ে বেশি শিক্ষণীয় এবং বিবেচ্য বিষয় ।
×