ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

* আরও শতাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ;###;*পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার যাচ্ছেন ১৯ নবেম্বর

ভয় দেখাতে রাখাইনে রাতে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে সেনা ও বিজিপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

ভয় দেখাতে রাখাইনে রাতে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে সেনা ও বিজিপি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঘটনার বিরুদ্ধে সারাবিশ্ব সোচ্চার থাকার পরও সেখান থেকে এখনও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার গভীর রাতে রওনা দিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নতুন করে এসেছে আরও শতাধিক রোহিঙ্গা। টেকনাফ থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, এদের তালিকাভুক্ত করে উখিয়ার বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের বিভিন্নস্থানে এখনও সেনা ও সে দেশের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) রাতেরবেলা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে সকলকে ভীতির মুখে রেখেছে। কি কারণে সেনা ও বিজিপি সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এ ধরনের গোলাগুলি চালাচ্ছে তার কোন কারণ নিশ্চিত করা যায়নি। তবে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এখনও ওপারে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে এপারে চলে আসে এবং এপার থেকে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী না হয় সে লক্ষ্যেই গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে। টেকনাফ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক শরীফুল ইসলাম জমাদ্দার জানিয়েছেন, ঘটনাটি তারাও জেনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আগামী ১৯ নবেম্বর জাপান, জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং ইইউর একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার যাচ্ছেন। তাদের উখিয়ার বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার আবারও এক বিবৃতিতে বলেছে, রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপকহারে ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামী ১৯ নবেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমার যাচ্ছেন। ২০ ও ২১ নবেম্বর নেপিডোতে আসেম বৈঠক শেষে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা চালানো হবে বলে সরকারী সূত্রে জানানো হয়েছে। বৈঠকে দুদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতোপূর্বেকার ঘোষণা অনুযায়ী যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করারও প্রয়াস থাকবে। তবে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যে চারটি শর্ত দেয়া হয়েছে তা থেকে সে দেশের স্টেট কাউন্সিলর দফতর সরে না এলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়টি ঝুলে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা, মিয়ানমার যে চারটি শর্ত দিয়েছে তাতে রয়েছে, প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দীর্ঘদিন বসবাস করেছে এমন প্রমাণপত্র দেখাতে হবে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের কেউ না কেউ অবস্থান করছেন এর প্রমাণও নিশ্চিত করতে হবে, বাংলাদেশে জন্ম নেয়া শিশুদের পিতা-মাতা উভয়কেই মিয়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণ দিতে হবে এবং যারা ফিরে যেতে চায় তারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছে এ বিষয়টিও ব্যক্ত করতে হবে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত ঘোষণা অনুযায়ী নতুন চুক্তি করতে চায়। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তৃতীয় কোন পক্ষ অর্থাৎ জাতিসংঘ বা অন্য কোন দেশের সংশ্লিষ্টতা তারা চায় না। অপরদিকে, কক্সবাজার অঞ্চলে বিশেষ করে টেকনাফ উখিয়াজুড়ে ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান গত তিনদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশী নাগরিকসহ ৩০ রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ॥ কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এ নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করছেন না। রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ॥ টেকনাফ ও উখিয়ার ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রিত বেশিরভাগ রোহিঙ্গার হাতে হাতে চলে যাচ্ছে মোবাইল ফোন। আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুসারে আশ্রয় শিবিরে আশ্রিত উদ্বাস্তুদের ব্যবসাবাণিজ্য, অর্থ উপার্জন, মুঠোফোন ব্যবহার, যত্রতত্র চলাফেরা ও বিকিকিনির নিয়ম নেই । স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ॥ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বৃহস্পতিবার উখিয়ার বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে সরকার। শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্যাতিত রোহিঙ্গার পাশে রয়েছেন। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি শিশুদের জন্য বিভিন্ন টিকা ও খাদ্যসামগ্রী নিশ্চিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা নারীরা গণধর্ষণের শিকার এইচআরডব্লিউ ॥ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার আবারও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নারীরা সে দেশের সেনাবাহিনীর হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেলও কক্সবাজার সফর করে বলেছেন, রাখাইনে সেনা অভিযান চলার সময় রোহিঙ্গা নারীরা গণধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। এইচআরডব্লিউ নারী অধিকার বিষয়ক গবেষক স্কাইহুইলার বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে ৫২ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন তাদের মধ্যে ২৯ জনই গণধর্ষণের শিকার।
×