ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরোজ মৃধা

লুটেরাদের রুখতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৯ নভেম্বর ২০১৭

লুটেরাদের রুখতে হবে

কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। বর্তমানে কৃষি বিপ্লবের ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, এটা হয়েছে কৃষক ও কৃষিবিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে। কিন্তু স্বাধীনতার সূচনালগ্নে অবস্থা এ রকম ছিল না, মানুষ কম অথচ কৃষি জমি পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে আশানুরূপ ফলন ছিল না। অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমির উপর এর প্রভাব পড়েছে । স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছরে জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ অথচ জমি বাড়েনি এক টুকরো। উল্টো জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে কৃষি জমি। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করার জন্য নতুন নতুন ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, পুকুর, হাট-বাজারসহ সরকারী উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে লাখ লাখ একর কৃষি জমি কমেছে। ভূমি দস্যুদের অত্যাচারে নদী, বিল, ঝিল, খাল, বনজঙ্গল কোন কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। ইটভাঁটি, হাউজিং ব্যবসার নামে ভূমিদস্যুদের লোভের শিকার হয়ে দখল হচ্ছে উর্বর কৃষি জমি। নদীতে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে নদী, হারিয়ে যাচ্ছে মাছের প্রাকৃতিক জলাধার, এতে কমছে বাংলার মিঠা পানির মাছ। মানুষ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে মাছ চাষের জন্য কৃষি জমিতে গড়ে তুলেছে মাছের খামার। বাংলাদেশ বন্যাপ্রবণ দেশ। প্রতি বছর উজানের পানিতে তলিয়ে যায় নদী, নালা, খাল, বিল, বাড়ে নদীভাঙ্গন, কমে কৃষি জমি। বেশি ফলনের আশায় রাসায়নিক ভেজাল সার প্রয়োগের ফলে আমাদের উর্বর কৃষি জমিগুলো আস্তে আস্তে অনুর্বর হয়ে যাচ্ছে, কৃষক হতাশ হয়ে ফসলের জমি অকৃষি খাতে ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা আর অন্যদিকে চাহিদার যোগান দেয়ার জায়গা কমছে। এই সমস্যা আমাদের জন্য চিন্তার কারণ, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য এটা চরম সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। এখন থেকে পরিকল্পনা না করলে চরম মুহূর্তে করার কিছুই থাকবে না। শহরের মতো গ্রামেও বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে, পতিত জমিগুলোতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, ভরাট হওয়া জলাধার, বিল-ঝিলগুলোকে খনন করে মাছ চাষ করে তিন ফসলি কৃষি জমির চাপ কমানো যায়। শুধু নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নয়, সাধারণ জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে কৃষি জমি রক্ষার জন্য। রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার উর্ধে উঠে ভূমিদস্যুদের মোকাবেলা করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা যাবে না, আবার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার স্বার্থে কৃষি জমিও নষ্ট করা যাবে না। এক্ষেত্রে পতিত জমিগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যে হারে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে তাতে এদেশের কৃষি ও কৃষকের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। নতুন নতুন আইন পাস করেও যদি এর কঠোর প্রয়োগ না করা যায়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এজন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। ময়মনসিংহ থেকে
×