ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতকরা ছুরি মেরে হত্যা করে

বিপিএল নিয়ে জুয়ায় বাধা দেয়ায় মানারাত ছাত্র খুন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ নভেম্বর ২০১৭

বিপিএল নিয়ে জুয়ায় বাধা দেয়ায় মানারাত ছাত্র খুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিপিএলের খেলা নিয়ে ‘জুয়ায়’ বাধা দেয়ায় রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় জুয়াড়িদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে নাসিম আহমেদ এমাজউদ্দিন (২৪) নামে এক শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। নাসিম মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। বাবার নাম আলী আহমেদ সাইফ উদ্দীন। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায়। সে মধ্যবাড্ডার পোস্ট অফিসের গলিতে নিজ বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন। এদিকে সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে তার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের ভাই ইফতেখার আহমেদ ফয়জুদ্দিন জানান, তার ভাই মহল্লায় জুয়া খেলায় বাধা দেয়ায় সোমবার সকালে বাসার সামনে স্থানীয় রমজান ও তার সঙ্গীরা তার ভাইকে ছুরি মেরে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তিনি জানান, বিপিএল খেলাকে কেন্দ্র করে মহল্লার ছেলেরা জুয়া খেলে। এতে বাধা দেয়ায় রবিবার রাতে এই নিয়ে রমজানের সঙ্গে নাসিমের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে বাড্ডা থানাধীন পোস্ট অফিসের গলির নিজ বাসার সামনে নাসিম হাঁটাহাঁটি করছিল। এ সময় জুয়াড়ি রমজান ও তার দুই সহযোগী নাসিমের গলায় ও কোমরে ৩টি স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরে তার আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা নাসিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে গুলশান বিভাগ পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, ডিবি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এদিকে পূর্ব বাড্ডায় নাসিমের বাসায় ছিল কান্নার রোল। মাত্র ৯ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল নাসিমের। নাসিমের নববধূ শামীমা জাহান অন্তির আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল। মাত্র নয় মাসের মাথায় বিধবা হলো অন্তি। বিলাপ করে বলছিল, ওরা আমার নাসিমকে কেড়ে নিল। আমি এখন কোথায় যাব? কি নিয়ে বাঁচব। পাশে নাসিমের মা পারভীন আক্তার বিলাপ করছিলেন। পারভীন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, জুয়া খেলায় বাধা দেয়ায় ছেলে খুন হবে ভাবতে পারিনি। ছেলে আমার জুয়া খেলে না। ক্যারাম খেলতে গিয়েই ওদের রোষানলে পড়েছে। হাতাহাতিও হয়েছে। সেটা যে খুন পর্যন্ত গড়াবে ভাবিনি। আদুরে ছেলে নাসিমকে হারাতে হবে ভাবিনি। এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পারভীন আক্তার। নিহতের ছোট ভাই ইম্পেরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র নাবিল আহমেদ জানান, বিপিএল খেলা নিয়ে বোর্ড (ক্যারাম বোর্ড) ঘরে রমরমা জুয়ার আসর চলছিল। সেখানে সন্ধ্যার পর ক্যারাম খেলতেন ভাই নাসিম। গত রাতে (রবিবার রাতে) ভাই নাসিম ক্যারাম খেলতে গিয়ে দেখেন বিপিএলের ম্যাচ নিয়ে মোটা অঙ্কের জুয়া চলছে। এতে বাধা দেন নাসিম। বাধার মুখে রমজান আলী, আসিফ, রশিদ, শহীদুল ও রফিক নামে কয়েকজনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় নাসিমের। ঘটনা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। নাবিল জানান, বিষয়টি মীমাংসা করতে গেলে রমজান ও রশিদ মারধর করেন নাসিমের বাবাকে। মহল্লার বড় ভাইয়েরা আজ (সোমবার) বিকেলে বসে বিষয়টি মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ সকালে ভাইকে বাসার নিচে ছুরিকাঘাত করে ওদেরই তিনজন। বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জনকণ্ঠকে জানান, হত্যাকা-ের পরপরই তদন্তে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম। ওসি জানান, বিপিএল ক্রিকেট খেলার বাজিতে বাধা দেয় নাসিম। এ নিয়ে নাসিমকে বাজিকর কয়েকজন চড়-থাপ্পড় দেয়। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য নাসিমের বাবা সাইফ উদ্দীন এলে বাজিকররা তাকে মারধর করে। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। এর আগে বাজিকররা সকালে নাসিমকে একা পেয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তবে এই হত্যাকা-ের পেছনে আরও কোন কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে মূল কারণ বেরিয়ে আসবে। তবে সন্ধ্যায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি। এ সময় ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, এখনও মামলা হয়নি। মামলার পরই মূল কার্যক্রম শুরু হবে। তবে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ডিএমপির গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশরাফ আলী জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্রিকেট খেলায় বাজি ধরাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে ২/৩ জন দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত ৩/৪ জনের নাম আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, সকাল ১০টার দিকে মধ্যবাড্ডার বাসা থেকে নাস্তা খেতে বের হন নাসিম। এসময় রাস্তার পূর্ব পরিচিত কয়েকজন তার পেটে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। এদিকে সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ নাসিমের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে। সোহেল মাহমুদ জানান, নাসিমের গলায় ও কোমরে ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×