ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ৮ হাসপাতালে চালু হচ্ছে পরমাণু চিকিৎসাসেবা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৭ নভেম্বর ২০১৭

আরও ৮ হাসপাতালে চালু হচ্ছে পরমাণু চিকিৎসাসেবা

আনোয়ার রোজেন ॥ গরিব ও সাধারণ মানুষকে স্বল্পমূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আওতায় দেশের আরও সরকারী আট গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হতে যাচ্ছে পরমাণু চিকিৎসাসেবা। এসব হাসপাতালের ক্যাম্পাসে আটটি ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এ্যান্ড এ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) স্থাপন করা হবে। এসব ইনমাস থেকে গরিব ও সাধারণ মানুষ কম খরচে পাবেন থাইরয়েড, কিডনি, লিভার ও বোন ক্যান্সারসহ নানা রোগের ডায়াগনসিস ও চিকিৎসাসেবা। এজন্য ৫৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, নতুন করে দেশের যে আট সরকারী হাসপাতালে এ সেবা চালু করা হবে সেগুলো হলোÑ ঢাকার শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট মহাখালী হাসপাতাল এবং পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা সরকারী হাসপাতাল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির উদ্যোক্তা। আজ একনেকে অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ পরামাণু শক্তি কমিশন (বাপশক) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত। এ পরমাণু চিকিৎসাসেবা চালু করে সেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করতে চায় সরকার। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের ১৪ সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইনমাস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এ্যান্ড এ্যালায়েড সায়েন্সেসের (নিনমাস) মাধ্যমে অত্যাধুনিক পরমাণু প্রযুক্তি চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ১৯৭০ সালে পরমাণু চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রামে পরমাণু চিকিৎসা ও আল্ট্রাসাউন্ড কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এ কেন্দ্রের আধুনিকায়ন সম্পন্ন হয় ২০০৮ সালের ৩০ জুন। বর্তমানে সেখানে ডুয়েল হেড ও সিঙ্গেল হেডস্পেক্ট গামা ক্যামেরার সাহায্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। তবে দেশে প্রতিষ্ঠিত নতুন নতুন সরকারী হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা নেই। এ প্রেক্ষাপটেই ৫৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে আট হাসপাতালে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে করা হবে। সূত্র জানায়, বিদ্যমান ইনমাস ও নিনমাসে সিটি স্ক্যানার, থাইরয়েড স্ক্যানার, আল্ট্রাসনোগ্রাম, কালার ডপলার এবং রেডিও ইমিউনোএ্যাসের জন্য একসেট কম্পিউটারাইজড গামা ওয়েল কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধাসহ রয়েছে ইন-ভিট্রো ল্যাব। পরমাণু যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রোগীদের অস্থি, কিডনি, থাইরয়েড গ্রন্থি, মস্তিষ্ক, যকৃত এবং অন্যান্য স্ট্যাটিক ও ডায়নামিক সিন্টিগ্রাফি সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়া হয়। গামা ক্যামেরার মাধ্যমে এসব পরীক্ষার মধ্যে কিডনির কার্যক্ষমতার বিভাজন পরিমাপ সহজ এবং খুবই তথ্যসমৃদ্ধ পরীক্ষা। নতুন আটটি হাসপাতালেও এসব সুবিধা গড়ে তোলা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে- আটটি ইনমাসের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানীয় ও বিদেশী যন্ত্রপাতি ক্রয়, আটটি ইনমাসের প্রতিটির জন্য ৬ তলা ভবনসহ অন্যান্য পূর্ত নির্মাণ ও বৈদ্যুতিক কাজ, ফার্নিচার সংগ্রহ, বিভিন্ন পর্যায়ে ২৬ জনবল নিয়োগ, একটি জীপ, একটি মাইক্রোবাস, আটটি ইনমাসের জন্য আট এ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কনফারেন্স আয়োজন ইত্যাদি। প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণ করে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে স্বল্পমূল্যে আধুনিক পরমাণু চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যাবে এবং পরমাণু চিকিৎসা বিষয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি লাভজনক।
×