ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার এবার পাচ্ছেন জ্যোতিপ্রকাশ ও মোজাফ্ফর

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ নভেম্বর ২০১৭

হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার এবার পাচ্ছেন  জ্যোতিপ্রকাশ ও  মোজাফ্ফর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭’ ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন প্রবীণ কথাশিল্পী জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। নবীন সাহিত্যশ্রেণীতে (অনূর্ধ চল্লিশ বছর বয়স্ক লেখক) পুরস্কার পাচ্ছেন মোজাফ্ফর হোসেন। পুরস্কার হিসেবে উভয়ে পাবেন যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং এক লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রদান করা হবে ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সার্টিফিকেট। আগামী ১২ নবেম্বর বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কার বিজয়ী দুজনের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুরস্কারের প্রবর্তক অন্যদিন পত্রিকার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এবং স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংকের এ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স এ্যান্ড ব্র্যান্ডিং ডিভিশন, সঞ্জীব চ্যাটার্জি। ক্ষণজন্মা লেখক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের নামে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় এই সাহিত্য পুরস্কার। প্রথম বছর দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী এবং সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। অন্যদিকে ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক এবং স্বকৃত নোমান। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ॥ এদেশের সাহিত্যে ষাটের দশক নিয়ে যে কোন বিবেচনার ক্ষেত্রেই অনিবার্যভাবে যাদের নাম উঠে আসবে, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাদের অন্যতম। অন্যতমই শুধু নয়, ব্যতিক্রমীও। সমগ্র বাংলা সাহিত্যের বিচারেই। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের জন্ম ১৯৩৯ সালে কুষ্টিয়ার আমলাবাড়িতে, মাতুলালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের পর সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ডিপ্লোমাও অর্জন করেন। ১৯৬৯-এ উচ্চ শিক্ষার্থে চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং সেখানেই গণযোগাযোগে এমএস ও সাংবাদিকতায় পিএইচডি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরু ঢাকায়, বাংলা একাডেমিতে। সেখান থেকে যান বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও জনসংযোগ/সম্পাদনার পেশায় কেটেছে দীর্ঘকাল। শেষের আট বছর বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশক জন ওয়াইলি এ্যান্ড সন্স পাবলিশার্সে। আটাশ বছর বিদেশবাসের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এনজিও ‘প্রশিকা’র তথ্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগেও খ-কালীন প্রফেসর ছিলেন, একইসঙ্গে। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হচ্ছে : দুর্বিনীত কাল (১৯৬৫), বহে না সুবাতাস (১৯৬৭), সিতাংশু তোর সমস্ত কথা (১৯৬৯), পুনরুদ্ধার (১৯৮৯), ফিরে যাও জ্যোৎস্নায় (১৯৯৭), প্লাবনভূমি (২০০০), জলপরী তো নাচবেই (২০০২), গল্পকল্প ও বাঁচামরার জীবন (২০০৫)। বাংলা ছোটগল্পে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি সাহিত্যসাধনার প্রথম জীবনেই প্রায়। পরে পেয়েছেন একুশে পদক (২০১৬) এবং ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (২০১৬)। মোজাফ্ফর হোসেন ॥ এই সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল গল্পকার মোজাফ্ফর হোসেন। জন্ম ১৯৮৬ সালে, মেহেরপুর জেলার শালিখা গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। এর আগে মেহেরপুর থেকে মাধ্যমিক ও কুষ্টিয়া থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পেশায় সাংবাদিক। মূলত ছোটগল্প লেখেন। পাশাপাশি অনুবাদক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে তার পরিচিতি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ‘শাশ্বতিকী’ নামক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ‘পুনরুত্থান’ গল্পের জন্য মোজাফ্ফর অরণি ছোটগল্প পুরস্কার পান ২০১২ সালে। তার রচিত ছোটগল্প ‘মিডিয়া ভার্সেস নোবডি’ বৈশাখী টেলিভিশনে ‘তোমার গল্পে সবার ঈদ পুরস্কার-২০১৩’ অর্জন করে। পরে নাটকটি টেলিভিশনে প্রচারিত হলে প্রশংসিত হন তিনি। ‘অতীত একটা ভিনদেশ’ গল্পগ্রন্থের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণীতে এ বছরের ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ পাচ্ছেন মোজাফ্ফর হোসেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘অতীত একটা ভিনদেশ’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা।
×