ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের রুল

বাল্যবিবাহের জন্য জনপ্রতিনিধিরা কেন দায়ী নন?

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

বাল্যবিবাহের জন্য জনপ্রতিনিধিরা কেন দায়ী নন?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিটি বাল্যবিবাহের জন্য সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা কেন দায়ী থাকবেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন চার মাসের জন্য স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। এ সময়ের মধ্যে তাকে নিয়মিত আপীল করতে বলা হয়েছে। সোমবার চেম্বার জজ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশগুলো প্রদান করে। অন্যদিকে নির্ধারিত পোশাক ও পরিচয়পত্র ছাড়া আইনজীবী সহকারীদের সুপ্রীমকোর্টে প্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ নির্দেশনা দেন। সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহাগ রঞ্জন পাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিটি বাল্যবিবাহের জন্য সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা কেন দায়ী থাকবেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। পত্রিকায় আসা খবর আমলে নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হযে এ রুল জারি করে। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটলে জনপ্রতিনিধিরা দায়ী হবেন বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে স্ব স্ব সংস্থার মেয়র ও কাউন্সিলর কেন দায়ী থাকবেন না এবং এ ধরনের বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও পদচ্যুতের নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ আদালতের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, আদালত আগামী ৩ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ রেখেছে। এ আদেশের কপি সব জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে পৌঁছে দিতেও জনপ্রশাসন এবং নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত বলে, ‘জনপ্রতিনিধিরা বাল্যবিবাহ বন্ধে ভূমিকা রাখবেন না, তা হতে পারে না। প্রতিটি বাড়িতে কার হাঁড়িতে কী রান্না হচ্ছে, এটা জনপ্রতিনিধিরা ভাল করে জানেন। জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় এ ধরনের বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটলে তারা দায়ী হবেন। জনপ্রতিনিধি হবেন, দায়িত্ব নেবেন না, তা হবে না।’ এরপর আদালত সংশ্লিষ্ট রুল জারির আদেশ দেয়। এ ছাড়া এ আদেশের অনুলিপি সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘২৪ ঘণ্টায় ৮ বাল্যবিবাহ বন্ধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ওই প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে আদালত রুল জারির আদেশ দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ অক্টোবর বিকেল থেকে ২৭ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত নাটোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ঢাকার সাভারে বাল্যবিবাহ থেকে রেহাই পায় আট কিশোরী। এর মধ্যে নাটোরের লালপুরে এক হবু বর ও বাড়ির মালিককে কারাদ-াদেশ দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুষ্টিয়ায় পাঁচটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। সাভারে সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামে ইউএনওর হস্তক্ষেপে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর (১৪) সঙ্গে তার বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষকের বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। বরিশালে ইউএনওর হস্তক্ষেপে একটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ঘটনা ছিল ১৩ হাজার ৩৩৪টি। পরের বছর ১৫ হাজার ৭৭৫টি বাল্যবিবাহ ঠেকানো গেলেও ২০১৬ সালে তা ছয় হাজার ৩৮৯টিতে নেমে আসে। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। জামিন স্থগিত ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন চার মাসের জন্য স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। এ সময়ের মধ্যে তাকে নিয়মিত আপীল করতে বলা হয়েছে। সোমবার সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ আদেশ দেন। আদালতে মিনার চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী। এর আগে গত ২২ অক্টোবর মিনার চৌধুরীকে ছয় মাসের জামিন দেয় হাইকোর্ট। পরিচয়পত্র ছাড়া আইনজীবী সহকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ নির্ধারিত পোশাক ও পরিচয়পত্র ছাড়া আইনজীবী সহকারীদের সুপ্রীমকোর্টে প্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এ নির্দেশনা দেন। সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহাগ রঞ্জন পাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘আইনজীবী সহকারীদের বারবার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ সহকারীই তা পালন করছেন না। ২৯ অক্টোবর থেকে নির্ধারিত পোশাক ও পরিচয়পত্র ছাড়া আইনজীবী সহকারীদের সুপ্রীমকোর্টে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলো।’ বিজ্ঞপ্তিতে কোর্ট অফিসার, কোর্ট কিপার ও সুপারিনটেনডেন্টদের ওই নির্দেশনা কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বরত সহকারী রেজিস্ট্রারদেরও বিষয়টি নজরদারি করতে বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
×