ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসআইবিএলের চেয়ারম্যান পদ হারালেন রেজাউল হক ॥ নাশকতায় অর্থায়ন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

এসআইবিএলের চেয়ারম্যান পদ হারালেন রেজাউল হক ॥ নাশকতায় অর্থায়ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নাশকতায় অর্থায়ন ও আর্থিক অনিয়মের বড় ধরনের অভিযোগ উঠেছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয়ের নামে সিএসআর ফান্ডের অর্থ নয়ছয় করেছে ব্যাংকটি। যার একটি বড় অংশ জঙ্গী অর্থায়নে ব্যয় করার অভিযোগে তদন্তে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকও। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে রেজাউল হককে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে যারা অর্থ জোগান দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। বিশেষ করে হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় গোয়েন্দারা অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে আর গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। সম্প্রতি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। ব্যাংকের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র অস্পষ্ট। বিভিন্ন নাশকতায় অর্থায়নের হতে পারে বলে দাবি ওই সূত্রের। সূত্রমতে জানা গেছে, ব্যাংকের নিয়মানুসারে পরিচালক হিসেবে পর্ষদে স্থান পেতে হলে ন্যূনতম ২% শেয়ার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এসআইবিএলের চেয়ারম্যান রেজাউল হক ২০১৬ সালের ২৯ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত ১%-এর নিচে শেয়ার নিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। অভিযোগ উঠেছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল হক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকের অর্থ বিভিন্ন খাতে ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, গত বছরে তিনি রাজনৈতিক অপচেষ্টা, নাশকতা ও দূরভিসন্ধি চরিতার্থে বিএনপি কর্মী, ফ্রিডম পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে গোপনে তাদের বিশাল অঙ্কের ফান্ড প্রদান করেন। এছাড়া গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশের অরাজক পরিস্থিতি ও পেট্রোলবোমার অর্থের জোগানদাতা হিসেবে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিএনপির পৃষ্ঠপোষক সদস্য হুজি জঙ্গীদের রাষ্ট্রের নাশকতামূলক কাজে অর্থায়ন, বিএনপি-জামায়াত-শিবির সমর্থকদের ব্যাংকে অবৈধভাবে চাকরিতে নিয়োগ, নিয়োগবাণিজ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত, ব্যাংকের বই ও ক্যালেন্ডার ছাপানো নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত, মানিলন্ডারিং, বিদেশে টাকা পাচার করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে রেজাউল হকের বিরুদ্ধে। এমনকি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের যাবতীয় খরচ তিনি বহন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান রেজাউল হকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। বিষয়টি জানিয়ে মুঠোবার্তা দিলেও তিনি কোন উত্তর দেননি। যোগাযোগ করা হলে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিকুর রহমান বলেন, উনার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু অভিযোগসমূহ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যারা এ সকল অভিযোগ এনেছেন তারা কেউ-ই তা প্রমাণ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আমি রেজাউল হকের অধীনে কাজ করেছি। আমার মনে হয় না তিনি এ ধরনের অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, শুধু রেজাউল হক একাই ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেননি। সুবিধা নিয়েছেন তার স্ত্রীও। যিনি এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফাউন্ডেশনের পরিচালক। তিনি নিয়মিত ব্যাংক থেকে বেতন-ভাতাদি নিচ্ছেন। ওই হাসপাতালে প্রায় ৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। যাদের প্রত্যেকের বেতন-ভাতাদি নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংক থেকেই পরিশোধ করা হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার নামে ব্যাংক থেকে ৮০ কোটি টাকা মুনাফাবিহীন লোন দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের পরিপন্থী। রেজাউল হকের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোঃ আনিসুল হক। জামায়াত মতাদর্শী এই ব্যক্তি হামদর্দ ল্যাবটরিজের পরিচালক (অর্থ), হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকা-ে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার রাজধানীর ওয়েস্টইন হোটেলে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি কাজী ওসমান আলী। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ।
×