ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের মন্ত্রীর সঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামালের আলোচনায় সিদ্ধান্ত ;###;ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আনান কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক ॥ রোহিঙ্গা ফেরাতে রাজি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক ॥ রোহিঙ্গা ফেরাতে রাজি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধি নিয়ে খুব শীঘ্রই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাখাইনে যেতে চাইলে মিয়ানমার সাড়া দেয়নি। মঙ্গলবার নেপিডোতে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. কর্নেল চ সুয়ি এবং পুলিশপ্রধানের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। আজ মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বসবেন। নেপিডোতে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. কর্নেল চ সুয়ি এবং পুলিশপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত দু’মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার রাজি হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে খুব শীঘ্রই একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। নবেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে এই যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বলেছেন কোফি আনান কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে যৌথ এই কমিটি ঠিক করবে রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারা ফেরত নেয়ার কথা বলেছে, তারা জানিয়েছে তাদের সরকারপ্রধান কোফি আনান কমিশন বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি কমিটি তৈরি করেছেন... কিন্তু আমরা বলেছি বাংলাদেশের সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির তত্ত্বাবধানেই কোফি আনান কমিশনের বাস্তবায়ন হতে হবে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিবের ওই কমিশন রোহিঙ্গাদের নাগরিক দেয়ার সুপারিশ করেছে যা নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, তিনি রাখাইনে নির্যাতন বন্ধের দাবি করেছেন যাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়। তারা বলেছেন, কোন নির্যাতন হচ্ছে না, তারা (রোহিঙ্গারা) নিজেরাই চলে যাচ্ছে। আমি বলেছি চলে যাওয়া ঠেকান আপনারা। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী স্বীকার করেন, তিনি নিজে রাখাইনে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাননি। মন্ত্রী বলেন, সীমান্তে মাইন পাতার প্রসঙ্গ তোলার পর, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অন্যদের দোষারোপ করেছে। তবে মিয়ানমার বলেছে তারা মাইন অপসারণের উদ্যোগ নেবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুধবার তার সঙ্গে আউং সান সুচির বৈঠক হবে। বাংলাদেশের এসব দাবি, প্রস্তাব এবং বক্তব্য তখন তিনি আবারও তুলবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরসা জঙ্গীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছ থেকে গোয়েন্দা তথ্য চেয়েছে। গত ২ অক্টোবর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। সে সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয় মিয়ানমার। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে একযোগে কাজ করবে। ঢাকায় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে এবং সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কিভাবে কী কাজ করবেÑ সেটা আমরা বাংলাদেশও ঠিক করব, ওরাও ঠিক করবে। সম্মতিটা হয়েছে এই আলোচনায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আরও আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শীঘ্রই মিয়ানমার সফরে যাবেন। সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মঙ্গলবার মিয়ানমার সফর করেন। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনাভিযানের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাঅধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। মিয়ানমারের নেত্রী সুচি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। দমনাভিযান শুরুর পর আজ ২৫ নবেম্বর দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে। তবে এখনও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না দেশটির সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোন সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর যে সহিংসতা হয়েছে তা মধ্যাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে পারে এবং সেখানে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
×