ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিনজন গ্রেফতার

স্পেনে তোয়ালে পাঠানোর আড়ালে নিষিদ্ধ মাদক পাচার

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

স্পেনে তোয়ালে পাঠানোর আড়ালে নিষিদ্ধ মাদক পাচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পেনে ব্যক্তিগতভাবে দুইজনের কাছে বাংলাদেশ থেকে তোয়ালে পাঠানোর আড়ালে পরিকল্পিতভাবে নিষিদ্ধ কেটামিন নামক মাদক পাচার করা হচ্ছিল। জি-কেটামিন ইনজেকশন মানুষের অপারেশন করার আগে অচেতন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইনজেকশনটি থেকেই মাদকটি তৈরি সংগ্রহ করে তা পাচার করা হতো। পাচারের সঙ্গে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে নিষিদ্ধ কেটামিন। শনাক্ত হয়েছে স্পেনে অবস্থানরত এক বাংলাদেশী ও এক স্পেনের নাগরিক। এদের বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নিতে তৎপরতা শুরু করেছে র‌্যাব। গত ২৩ অক্টোবর রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানী রূপনগর থানাধীন পল্লবী দ্বিতীয় পর্বের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সি ব্লকের ১৮৭ নম্বর সাততলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য জয়পুরহাটের বাসিন্দা মীর মঞ্জুর মোর্শেদ ওরফে সানী ও তার সহযোগী লালমনিরহাটের বাসিন্দা মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে চয়ন এবং সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা মোঃ হাবিবুল্লাহ খানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মীর মঞ্জুর মোর্শেদ পেশায় একজন খামার ব্যবসায়ী। তিনি প্রায় ৭ বছর লন্ডনে থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। আর গ্রেফতারকৃত মাহমুদুল হাসান এলএলবি অনার্স এবং মোঃ হাবিবুল্লাহ খান এমবিএ সম্পন্ন করেন। এ দু’জন একটি ব্যাংকের মার্কেটিং শাখায় কর্মরত। তারা স্ব-স্ব ব্যবসা ও চাকরির অন্তরালে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এদের কাছ থেকে ১৪৫টি জি কেটামিন লেভেলযুক্ত বোতলে রক্ষিত প্রায় দেড় লিটার জি কেটামিন, একশ’ গ্রাম করে ৩৪টি সাদা তোয়ালেতে থাকা প্রায় সাড়ে তিন কেজি জি কেটামিন, ১৮০টি জি কেটামিনের খালি বোতল উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত ৩৪টি জি কেটামিন যুক্ত তোয়ালের মধ্যে ১৮টিই একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে উদ্ধার হয়েছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, শুধু মানুষের অপারেশন করার জন্য অজ্ঞান করার কাজে জি-কেটামিন ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এই জি কেটামিন স্পেনসহ ইউরোপে এখন কোকেনের বিকল্প হিসেবে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে বিদেশী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে দেশীয় একটি চক্র অভিনব কায়দায় কেটামিন পাচার করছে বিদেশে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, গ্রেফতারকৃত মীর মঞ্জুর মোর্শেদের ভাই মাহাদী মঞ্জুর মান্না প্রায় ১৫ বছর ধরে স্পেনে অবস্থান করছেন। সে স্পেনে ইন্টারনেট কলিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়িক সূত্রে মাহাদীর সঙ্গে স্পেনের নাগরিক আরামাডো গঞ্জালিওর পরিচয়। স্পেনে কেটামিনের চাহিদা থাকায় মাহাদী ও আরামাডো একত্রে বাংলাদেশ থেকে কেটামিন স্পেনে পাচার করার পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে তারা দুজন বাংলাদেশে আসে। পুরো প্রক্রিয়াটি তারা গ্রেফতারকৃতদের হাতে কলমে শিখিয়ে দেয়। ইনজেকশন থেকে কেটামিন কিভাবে বের করতে হয় তা শেখায়। এরপর গ্রেফতারকৃতরা বাড়িটির চতুর্থ তলার চিলেকোঠায় থাকা দুইটি কক্ষ ভাড়া নেয়। সন্দেহ এড়াতে গ্রেফতারকৃত সানী পরিবার নিয়ে বাড়িটিতে বসবাস করত। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, জি- কেটামিন নামক নিষিদ্ধ এই মাদকটি দেশের বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করতো তারা। এরপর তা আধঘণ্টা ধরে ইনজেকশনটি তাপ দিয়ে এর উপাদান ঘন করত। ঘন জি কেটামিন তোয়ালের ভেতরে রেখে তা স্প্রে করে শুকানো হতো। তোয়ালেগুলো ভাঁজ করে সুরক্ষিতভাবে প্যাকেটের ভিতরে সীল করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্পেনের নাগরিক আরামাডোর ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিত। স্পেনে মাহাদী মঞ্জুর মান্না ও আরামাডো তোয়ালে থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহের কাজটি করতেন। এ পর্যন্ত চক্রটি চারটি চালান স্পেনে পাঠিয়েছে।
×