ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

স্মৃতির অলিন্দে নিসর্গসখা দ্বিজেন শর্মা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

স্মৃতির অলিন্দে নিসর্গসখা দ্বিজেন শর্মা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নশ্বর পৃথিবীর নিয়মে চলে যেতে হয় সবাইকে। তাই বলে হারিয়ে যায় না সবাই। ধরিত্রীর প্রতি দায়বদ্ধতায় কর্মের আলোয় না থেকে রয়ে যান কেউ কেউ। সহজাত গুণেই উঠে আসেন অপরের মননে। তেমনই একজন নিসর্গসখা দ্বিজেন শর্মা। মানুষ ও প্রকৃতির সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে সভ্যতা গড়ার প্রত্যাশী এই ব্যক্তিত্ব উঠে এলেন স্মৃতির অলিন্দে। সেই স্মৃতির পথ ধরে উচ্চারিত হলো বৃক্ষ, পুষ্প, তরুলতা কিংবা উদ্ভিদে তার মমত্বের বয়ান। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে দ্বিজেন শর্মার গড়া পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সংগঠন তরুপল্লব। দ্বিজেন শর্মাকে স্মরণ করে বক্তারা বলেন, তিনি শর্মা নির্লোভ, পরিপূর্ণ ও সুন্দর জীবন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি গাছকে চিনতেন, গাছকে চেনাতেন। তার সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের প্রত্যেককে তিনি প্রকৃতিকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন, সচেতন করেছেন। তার মতো নিসর্গপ্রেমিক খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হবে। বক্তারা এ সময় দ্বিজেন শর্মাকে ‘প্রকৃতিপুত্র’ খেতাব দিয়ে তার নামে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের নামকরণের প্রস্তাব রাখা হয়। একইসঙ্গে রমনা পার্কের একটি স্থানকে দ্বিজেন অঙ্গন নামকরণেরও প্রস্তাব রাখা হয়। স্মরণের এ আয়োজনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দ্বিজেন শর্মার সহধর্মিণী ড. দেবী শর্মা, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক, পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন প্রমুখ। আয়োজনের শুরুতে দ্বিজেন শর্মার স্মৃতির উদ্দেশে নীরবতা পালন করা হয়। এর পর তার জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এ উপলক্ষে ‘প্রকৃতিপত্র’ প্রকাশ করেছে একটি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য সংখ্যা। ছিল তার বইয়ের একক প্রদর্শনীও। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, কিছুদিন আগে ‘প্রকৃতিপুত্র দ্বিজেন শর্মা’ বইয়ের নামকরণ দেখে চমকে গিয়েছিলাম। আমি দীর্ঘদিন তাকে প্রকৃতির মধ্যে প্রকৃতি হতে দেখেছি। মনে হতো, প্রকৃতির মধ্যে তিনি আরেক প্রকৃতি হয়ে থাকতেন। তিনি যে প্রকৃতির পুত্র, সেটা ওই বই থেকে টের পেলাম। এর পর তাকে প্রকৃতিপুত্র হিসেবেই ডাকতে পারি। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো দ্বিজেন দা কোন মানুষ নন। তিনি প্রকৃতির পথে হেঁটে যাওয়া এক সত্তা। দেবী শর্মা বলেন, দ্বিজেন শর্মার দ্বিজেন শর্মা হয়ে ওঠা পূর্বনির্ধারিত ছিল। কলকাতায় গিয়েছিলেন চিকিৎসক হওয়ার জন্য, কিন্তু তিনি তা হননি। এর বহু পরে ১৯৯৫ সালে আমরা যখন মস্কো থেকে দেশে ফিরলাম তখন তিনি প্রকৃতি ও মানুষকে ভালবাসার সুযোগ পেলেন। গড়ে তুললেন নানা সংগঠন, যাত্রা শুরু করে তরুপল্লব। তখন বিপ্রদাশ বড়ুয়া, মোকারম হোসেনের মতো ছাত্ররা তার পিছু নিলেন। তিনি তাদের গাছ দেখাতেন, গাছ চেনাতেন। মফিদুল হক বলেন, বই নিয়ে তার সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ। মস্কো থেকে কখন বই লাগলে বলতেন, আমার আমার কাছ থেকেও নিতেন। সে সময় তিনি আমাকে চিঠি লিখতেন, যার নিচে তিনি লিখতেন ‘চিরদিনের দ্বিজেন দা’। তখন এটা মামুলি মনে হয়েছিল। এখন বুঝি ওই বাক্য লেখে চিঠি পাওয়াটা কত বড় অলৌকিক আশীর্বাদ। আইনুন নিশাত বলেন, জীববৈচিত্র্য নিয়ে জানাশোনা লোক অনেকেই আছেন। কিন্তু মাটি, পানি, বাতাস সমন্বয়ে প্রকৃতির যে বৈচিত্র্যময়তা তা আমাদের নটর ডেম কলেজে পড়িয়েছেন দ্বিজেন শর্মা। আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলেও যখন পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে এসেছি তখন স্যারের সেই ক্লাসগুলো থেকে আমি উদাহরণ দিতাম। আলী ইমাম বলেন, তিনি এ পৃথিবীতে নয়, অন্য এক পৃথিবীর হাতছানি নিয়ে এসেছিলেন। রমনা উদ্যানে যদি দ্বিজেন প্রাঙ্গণ চালু করা যায়, তাহলে আমরা সবুজকে উপভোগ করতে পারব। মোকারম হোসেন বলেন, আমরা দ্বিজেন শর্মার নামে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটির নামকরণ করার দাবি জানাচ্ছি। বৃক্ষসখা ও উদ্যানবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘ধেয়ানে আলোকরেখা’ রবীন্দ্রনাথের কবিতার পঙ্ক্তিমালায় সাজানো আয়োজন। পরিবেশিত হলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্বাচিত কয়েকটি কবিতার কোলাজ। আর কবিগুরুর কবিতার সেই কোলাজ নিয়ে মঞ্চস্থ হলো আবৃত্তি প্রযোজনা ‘ধেয়ানে আলোকরেখা’। শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে এ আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন করে মুক্তধারা আবৃত্তিচর্চা কেন্দ্র। প্রযোজনাটির গ্রন্থনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল ও মাহমুদা সিদ্দিকা সুমি। নাসিমা খান বকুল নির্দেশিত রবীন্দ্র-কবিতার আবৃত্তি প্রযোজনাটি কবিতাপ্রেমীদের ছড়িয়েছে প্রশান্তির পরশ। পরিবেশনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির মঞ্চ পরিকল্পনাতেও ছিল নতুনত্ব । দর্শকের কাছে চমকপ্রদ উপস্থাপনার জন্য আবৃত্তিশিল্পী ও মঞ্চকে বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে করে তোলা হয়েছিল আকর্ষণীয়। পরিবেশনায় অংশ নেয়া আবৃত্তিশিল্পীরা হলেন মাহমুদা সিদ্দিকা সুমি, ইকবাল আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, শাহানা শিল্পী, লুনা সিকদার, মহিউদ্দিন শামীম, সাজ্জাদ হোসেন, শায়লা লাবনী, ফারজানা আফরিন, নূরজাহান আক্তার কেয়া, খোরশেদ আলম মামুন।
×