ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রূপালী ব্যাংক অবরুদ্ধ

বগুড়া শহরে ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

বগুড়া শহরে ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোটি টাকার বিরোধপূর্ণ সম্পত্তি মধ্যরাতে হঠাৎ করে ঘিরে ফেলে দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর ‘মারোয়ারি ধর্মশালা কমিটি’র নামে জায়গাটি দখল করে সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। গভীর রাতে টিন দিয়ে হঠাৎ করে ওই জায়গা দখল করায় সেখানে অবস্থিত রূপালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ব্যাংকের এই কার্যালয়ে ডিজিএমসহ ১৯ জন স্টাফ কর্মরত রয়েছেন। ব্যাংক কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, তাদের আঞ্চলিক কার্যালয় প্রাচীর (টিনের শীট) দিয়ে দখল করার আগে তাদের কোন উচ্ছেদ নোটিস দেয়া হয়নি। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে এবং ঘটনা পর শুক্রবার বগুড়া জেলা প্রশাসনকে জানান হয়েছে। এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হয়েছে বলে রূপালী ব্যাংক বগুড়ার ডিজিএম জানিয়েছেন। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমথার পঞ্চাশ গজের মধ্যে ওই জায়গায় রূপালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয় ছাড়াও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রয়েছে। ৮ অক্টোবর মারোয়ারি ধর্মশালা কমিটি জায়গাটি নিজেদের বলে উল্লেখ করে এক সংবাদ সম্মেলনে সেখানে ডেভলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ধর্মশাল কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে ওই জায়গা নিয়ে বিভিন্ন বিরোধ সামনে চলে আসাসহ নানা গুঞ্জন শুরু হয়। বগুড়া মারোয়ারি ধর্মশালা কমিটি ২৮ শতাংশ জায়গার এই সম্পত্তি নিজেদের দাবি করে জানায়, আদালত থেকে এই জায়গার রায় তাদের পক্ষে রয়েছে। ১৯৮২ সালে সাবজজ কোর্ট থেকে তারা ওই রায় পান বলে ধর্মশালা কমিটিরি সভাপতি কল্যাণ প্রসাদ পোদ্দার জানিয়েছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে ধর্মশালা কমিটি জায়গা তাদের দাবি করলেও এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি জানান, জায়গার খাজনা খারিজ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে ১০ অক্টোবর ওই জায়গায় ব্যবসা করে আসা ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী হকার্স সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবিকে মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে জানায়, জায়গা নিয়ে ভিপি অবমুক্তির একটি মামলা বগুড়া জেলা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন ট্রাইবুনালে পেন্ডিং রয়েছে। এই মামলার বাদী ধর্মশালা কমিটির সভাপতি। এ বিষয়ে ধর্মশালা কমিটির সভাপতি মামলা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আগামী ২৯ অক্টোবর এর ধার্র্য তারিখ রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চতর আদালতে আরেকটি রিট আবেদন রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে জায়গাটি ঘিলে ফেলা হয়। রূপালী ব্যাংক বগুড়া আঞ্চলিক শাখার নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্য আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে শতাধিক ব্যক্তি এসে ব্যাংকের সামনে প্রাচীর তুলে দেয়। এ সময় তিনি ভয়ে বাইরে বের হননি। ভোর ৪টা পর্যন্ত দখল চলে। রূপালী ব্যাংক বগুড়া জোনের ডিজিএম হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, তাদের কোন উচ্ছেদ নোটিস না দিয়েই রাতে তাদের কার্যালয়ের সামনে প্রাচীর দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি অফিস করেন। খবর পেয়ে তাদের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ১০/১২ দিন আগে ধর্মশালার পক্ষে কয়েকজন তাদের অফিস ছাড়তে বললে তিনি উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়ে করণীয় জানতে চেয়েছেন। এরই মাঝে তাদের কার্যালয় ঘিরে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে জানান হবে বলে তিনি জানান। অপরদিকে মারোয়ারি ধর্মশালা কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, দিনের বেলা কাজ করা সম্ভব নয় বলে তারা রাতে জায়াগা ঘিরে দিয়েছেন। ব্যাংককে কোন উচ্ছেদ নোটিস না দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং এক সময় ব্যাংক তাদের ভাড়াটে ছিল বলে তিনি দাবি করেন। রূপালী ব্যাংকের ডিজিএম জানিয়েছেন ১৯৭৫ সাল থেকে ওই জায়াগায় রূপালী ব্যাংক রয়েছে। এটি বগুড়া ও জয়পুরহাটের জোনাল শাখা। জায়গা দখলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক নুরে আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ওই সম্পত্তি সরকারী। জায়গাটি যদি সরকারী হয়, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×