ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাতের আশঙ্কা

সরকারী ভবন দখলের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

সরকারী ভবন দখলের চেষ্টা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ৫৫নং বাড়ি দখলের চেষ্টা আবারও করেছে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য। পরিবেশ অধিদফতরের সামনে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাট্টলী সার্কেল অফিস দখলের চেষ্টায় এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে ম্যানেজ করে ভূমি অফিস দখলের চেষ্টা করলেও তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না উভয় প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে, ভূমিদস্যু ইকবাল ভূমি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন এবং স্থগিতাদেশ রয়েছে এমন তথ্য প্রকাশ করলেও কিসের ভিত্তিতে রিট মঞ্জুর হলো তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভুয়া কাগজপত্র আদালতে দাখিল করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এই ভূমিদস্যু। কিন্তু কেন পুলিশ বা জেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না তা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ব্যাপারে কাট্টলীসার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জোবায়ের আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, হাইকোর্টে রিট অমান্য করা যায় না। তবে সরকারী কাজে বাধা দেয়াসহ তার অনেক অনিয়মের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। অচিরেই তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, গত ১২ মে সরকারী ছুটির দিনে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ইকবাল হোসেন খান জাকির হোসেন রোডসংলগ্ন কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের নতুন দফতর দখলের চেষ্টা চালায়। গণপূর্ত বিভাগের অধীনে থাকা ৫৫ নম্বর বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় মেরামত ও রঙের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় মহিলা দিয়ে দফতর দখলের চেষ্টা চালায়। এর আগে গত পহেলা মে একইভাবে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন ও স্থগিতাদেশ আদেশ রয়েছে এমন দাবি করে আকবর শাহ থানা পুলিশ ও মহানগর ভূমি অফিসকে বিতাড়িত করে চাকরিচ্যুত এ পুলিশ সদস্য। এর আগে এ ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে জাকির হোসেন সড়কের পাশে ‘সহকারী কমিশনার (ভূমি), কাট্টলী সার্কেল’ দফতরের সাইনবোর্ড সাঁটানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় নুরুজ্জামান চক্রান্ত করে ভূমি অফিসের লোকজনকে বিদ্যুত ব্যবহারে সহায়তা না করে উল্টো সাইনবোর্ড সঁাঁটানো ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে স্থানীয় আরেকটি আবাসিক ভবন থেকে বিদ্যুত ব্যবহার করে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়। এরপর থেকে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় নতুন অফিস স্থানান্তরের পূর্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মেরামতের কাজ শুরু হয়। সেখানে একজন দারোয়ানও নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যের স্ত্রীসহ আরও কয়েক মহিলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করে মেরামত কাজে নিয়োজিতদের বের করে দেয়। অপরদিকে, ৪৬ শতক ভূমির প্রায় ১৬ শতক পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী প্রধান সাইদুজ্জামান গংয়ের অবৈধ দখলে রয়েছে। ৫৫ নং ভবনের সামনে খালি পড়ে বাকি জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখলে নেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে চক্রের হোতা ও চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য মোঃ ইকবালসহ সহযোগীরা দখলে নেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। জানা গেছে, আকবর শাহ থানাধীন জাকির হোসেন রোডসংলগ্ন পরিবেশ অধিদফতরের ঠিক সম্মুখে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৫৫নং দ্বিতল বাড়ি। পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওপর মাত্র ১০ শতক গড়ে ওঠা এ বাড়িটির আশপাশের ভূমিসহ ৪৬ শতক জায়গার আয়তনে রয়েছে। আরএস খতিয়ান নং-১০৭ এর আওতায় বিএস দাগ নং-৮১ এ ভূমির পরিমাণ ১৯ শতক, ৮৯নং দাগে ১৭ শতক ও ৯৫নং দাগে ১০ শতক ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দশ শতক ভূমির ওপর গণপূর্তের নিয়ন্ত্রণে একটি দ্বিতল বাড়ি রয়েছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী এ পরিত্যক্ত বাড়িটি বর্তমানে বরাদ্দপ্রাপ্ত হিসেবে তথ্য ও প্রকাশনা অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীরা সপরিবারে বসবাস করেন। বিভাগীয় কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের এক চিঠিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে নবসৃষ্ট কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের জন্য সংরক্ষিত পরিত্যক্ত বাড়ি নং-৫৫ (পাঞ্জাবী লেন, আকবর শাহ, চট্টগ্রাম) বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছিল। বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামের রাজস্ব শাখা থেকে এ চিঠিটি গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রেরণ করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় নতুন তিনটি সার্কেল ভূমি অফিস সৃজন করা হয়েছে দেখিয়ে কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের কার্যক্রম চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসে সম্পন্ন করা হচ্ছে এমন দুর্দশার কথা উল্লেখ করে এ পরিত্যক্ত বাড়িটি বরাদ্দের সুপারিশ করা হয় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোমিনুর রশিদ আমিনের পক্ষ থেকে। বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম ও সভাপতি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থা বোর্ড চট্টগ্রাম বরাবর প্রেরিত এ চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম ও উপপরিচালক সরকারী আবাসন পরিদফতর চট্টগ্রামকে দেয়া হয়। সর্বশেষ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার রাজস্ব এর প্রেরিত চিঠি অনুযায়ী কাট্টলী ভূমি অফিসের অনুকূলে বরাদ্দের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ১৬৫তম সভায় উপস্থাপনের জন্য সদস্য সচিব (এপিএমবি) কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। গত ১৭ এপ্রিলের এ নির্দেশনায় সহকারী কমিশনার (উন্নয়ন) নাহিদা আক্তার তানিয়া স্বাক্ষর করেছেন। এমনকি এ চিঠি জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম ও সভাপতি জেলা আবাসন বোর্ড, চট্টগ্রাম, উপ-পরিচালক সরকারী আবাসন পরিদফতর, চট্টগ্রাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ ও সদস্য সচিব (এপিএমবি) চট্টগ্রামকে অনুলিপি প্রদান করা হয়। অবশেষে ১৬৫তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাট্টলী ভূমি অফিসের অনুকূলে এই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
×