ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ইনিংস পরাজয়ের মুখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৮ অক্টোবর ২০১৭

এবার ইনিংস পরাজয়ের মুখে বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ১০ টেস্টে দুটি ড্র করলেও বাকি ৮টির মধ্যে সাতটিতেই ইনিংস পরাজয় দেখেছিল বাংলাদেশ দল। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কোনবারই ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারেনি। তবে পোচেফস্ট্রুমে হওয়া প্রথম টেস্টে সেই ফাড়া কাটিয়ে ওঠে। ইনিংস ব্যবধানের লজ্জা এড়াতে পারলেও হেরে যায় ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে। কিন্তু ব্লুমফন্টেইন টেস্টে আবারও ইনিংস পরাজয়ের বড় শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর মাত্র ১১৪ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫৯ রানে পিছিয়ে থেকে নিশ্চিতভাবেই ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা আগ্রাসন চালালেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন প্রোটিয়া পেসারদের কাছে। ম্যাচের দ্বিতীয়দিনেই সে কারণে ইনিংস পরাজয় দরজায় কড়া নাড়ছে। ম্যাচের প্রথমদিনেই ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ দল। কারণ ৩ উইকেটে ৪২৮ রান তুলে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং স্বর্গে। প্রথম টেস্টের মতো এবারও টস জিতে আগে বোলিং নেয়ার খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশের বোলারদের। এমনকি পেসারদের জন্য সহায়ক উইকেট হলেও বাংলাদেশী পেসাররা কোন প্রভাবই ফেলতে পারেননি। আগেরদিন দুই ওপেনার ডিন এলগার ও এইডেন মার্করাম জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকান বাংলাদেশের বোলারদের সঙ্গে ছেলেখেলায় মেতে উঠে। দ্বিতীয়দিন সেখান থেকে দলকে আরও বিশাল সংগ্রহে নিয়ে গেছেন হাশিম আমলা ও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন আমলা এবং অধিনায়ক প্লেসিস ৬২ রানে। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায় প্রমাণ করেছেন তারা। দ্বিতীয়দিন ব্যাট করতে নেমে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক আমলা সেঞ্চুরি তুলে নেন। ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি ছিল তার এটি। সাবেক অধিনায়ক স্মিথ ১১৬ টেস্টে করেছিলেন ২৭ সেঞ্চুরি। ১০৯তম টেস্টে তাকে ছাড়িয়ে এখন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক আমলা। প্লেসিসও ক্যারিয়ারের সপ্তম শতক হাঁকান। আমলাকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত শুভাশীষ রায় শিকার করেন। দারুণ বোলিং করা এ পেসার সরাসরি বোল্ড করে দেন তাকে। আমলা ১৬৩ বলে ১৭ চারে ১৩২ রানে সাজঘরে ফেরেন। চতুর্থ উইকেটে এ দু’জন ২৪৭ রান তোলেন। আমলা ফিরে যাওয়ার পরও উইকেটে ছিলেন প্লেসিস। তিনি ১৮১ বলে ১৫ চারে ১৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায়ত্ব এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। শুভাশীষ ছাড়া আর কোন বোলারই পাত্তা পাননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে। হয়েছেন তুলোধুনা। যার কারণে ওভারপ্রতি প্রায় ৫ (৪.৭৭) করে রান তুলেছে স্বাগতিক দল। চা বিরতির ঘণ্টা দেড়েক আগে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ এদিন ম্যাচ দেড় ঘণ্টা পরে শুরু হয় বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টিতে সিক্ত পরিবেশেও বাংলাদেশের কোন বোলার তেমন সুবিধা করতে পারেননি। উল্টো দ্রুতগতিতে রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলা শুরুর পর। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটি তাদের নিজেদের মাটিতে সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ। এর আগের টেস্টেই ৩ উইকেটে প্রথম ইনিংসে ৪৯৬ রানই ছিল সেরা। বিশাল সংগ্রহের নিচে আগের ম্যাচেও চাপা পড়েছিল বাংলাদেশ দল। সাকিব-তামিমকে ছাড়া ব্লুমফন্টেইনে নেমে যেন একেবারেই কুঁকড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখা গেল। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিংয়ে নেই ডেল স্টেইন, ভারনন ফিল্যান্ডার, মরনে মরকেলের মতো অন্যতম তিন স্তম্ভ। এরপরও শুরু থেকেই দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাটিং চিত্র ফুটে ওঠে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে। শুধু ইমরুল কায়েস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিও সাজঘরে ফেরেন চা বিরতির ঠিক পরেই ২৬ রান করে। আউট হওয়া বাকিদের মধ্যে আর কেউ দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছুতে পারেননি। ৬ নম্বরে নেমে তরুণ লিটন কুমার দাশ দারুণ ব্যাটিং করেছেন। তিনি প্রতিরোধ গড়েন প্রোটিয়া বোলিং তোপের মুখে। তার সঙ্গে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দেয়ার মতো ব্যাটিং করেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সৌম্য সরকার (৯), মুমিনুল হক (৪), মুশফিকুর রহীম (৭), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৪), সাব্বির রহমান (০) সাজঘরে ফিরে গেছেন উল্টোপাল্টা ব্যাট চালিয়ে। মাত্র ৬৫ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে থাকা বাংলাদেশ এখন লিটন-তাইজুলে লড়াই চালিয়ে গেলেও ইনিংস হার এড়াতেই প্রয়োজন ২৬০ রান। সেটা বাকি ৪ উইকেটে করা প্রায় অসম্ভবই। কারণ লিটন ছাড়া আর কোন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নেই।
×