ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাইসেন্স ছাড়া চাল গমের ব্যবসা চলবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩ অক্টোবর ২০১৭

লাইসেন্স ছাড়া চাল গমের ব্যবসা চলবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ লাইসেন্স ছাড়া আর চাল-গমের ব্যবসা করা যাবে না। যারা এই ব্যবসা করছেন তাদের আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। নির্ধারিত সময়ের পর বিনা লইসেন্সে কেউ চাল-গমের ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনে তিন বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে দেশের সকল আরসি ফুড (আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক) ও ডিসি ফুডদের (জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) নিয়ে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের একথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চাল ও গমের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী এবং এ দুটি পণ্যের আমদানিকারক ও মিলারদের (যারা আইন অনুযায়ী লাইসেন্স নেননি) আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। অন্যথায় ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব এ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্স না নিলে কন্ট্রোল অব এ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের তিন বছরের কারাদ- ও জরিমানার মুখে পড়তে হবে। তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব এ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী এক মেট্রিক টনের বেশি চাল ও গম ব্যবসায়ীদের খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের আরসি ফুড ও ডিসি ফুডরা অজ্ঞতার কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে হোক এতদিন এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। আইনটি তারা কার্যকর করেননি। এ আইন অনুযায়ী মিলারকে খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। তেমনিভাবে আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী; প্রত্যেককেই লাইসেন্স নিতে হবে খাদ্য অধিদফতর থেকে। বড় বড় ব্যবসায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে থাকে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য অধিদফতরকে বেশিরভাগ সময় তারা ইগনোর (অবহেলা) করে। মনে করেন খাদ্য অধিদফতরের লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। কিন্তু কন্ট্রোল অব এ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী অন্যান্য দফতরের লাইসেন্স থাকার পরও আমাদের দফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। প্রত্যেককে (মিলার, পাইকারি, খুচরা ও অমদানিকারক) মজুদ করা চাল ও গমের পাক্ষিক হিসাব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দিতে হবে, এটা আইনে বলা আছে। কিন্তু তারা সেটা করেন না। মজুদের পাক্ষিক হিসাব না দিলে এই আইনে তিন বছরের জেলসহ জরিমানার বিধান আছে। চাল ও গম ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে হবে এবং পরিষ্কার পাক্ষিক হিসাব দিতে হবে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন যারা চিনি, গম ও আটার ব্যবসা করেন তারা কিন্তু চালের ব্যবসাও করেন। অনেকের লাইসেন্স আছে, অনেকের নেই। একটি চক্র চালের দাম বাড়িয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীর বিভিন্ন গোডাউনে বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ ছিল, এখনও আছে। আমি তাদের নাম বলতে চাই না। এরাই বিভিন্ন সময় সিন্ডিকেট করে তেলের দাম, চিনির দাম বাড়ায়। খবর পেয়েছি বিভিন্ন গোডাউনে তাদের এক লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ বস্তা চাল মজুদ রয়েছে। আমাদের কাছ থেকে তারা লাইসেন্সও নিচ্ছে না। আইন অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে একজন ব্যবসায়ী ৩০০ মেট্রিক টন ধান ও চাল ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। ৩০ দিনের মধ্যে এই মজুদ বিক্রি না হলে রিপোর্ট করে জানাতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আরসি ফুড ও ডিসি ফুডদের আজকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত তারা নোটিস করবেন ব্যবসায়ীদের। আইন অনুযায়ী আমাদের এখান থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। আমরা প্যানিক সৃষ্টি করতে চাই না। অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে তাদের অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। না হয় আমরা জেলা প্রশাসক, মোবাইল কোর্ট ও আমাদের অফিসারদের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। অকাল বন্যার সুযোগ নিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, ইনশাআল্লাহ আমরা সফলতার সঙ্গে সেই সঙ্কট মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। সঙ্কট সৃষ্টিকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। এই গোষ্ঠী যাতে আর কোনদিন সঙ্কট অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারে, অপতৎপরতা না চালাতে পারে এ জন্য আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ নিয়েছি। চালের দাম নিম্নমুখী এবং দাম ক্রমান্বয়ে আরও কমবে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, এক মাস পর আমন আসবে, কোন সমস্যা আমাদের নেই। আমরা আমন সংগ্রহ করতে পারব। মজুদ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে আর কমার কোন সম্ভাবনা নেই। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তাদের শনাক্ত করে তারা ব্যবস্থা নেবে। ওএমএস-এ দৈনিক বরাদ্দের ৭৫% চাল বিক্রি হচ্ছে দৈনিক বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ ওএমএসের চাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। যদিও মানুষ আতপ চাল কিনছে না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ওএমএসে সারাদেশে দিনে দুই হাজার ১০৫ টন আতপ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়, বিক্রি হয় দেড় হাজার টন। ঢাকায় প্রতিদিন ১২০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৯০ টন চাল বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। ওএমএসের চাল বিক্রি হচ্ছে না এ খবর সঠিক না। চালের দাম বাড়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে খোলাবাজারে আতপ চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। তবে বেশিরভাগ মানুষ সেদ্ধ চালের ভাত খায় বলে আতপ চালের প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কামরুল ইসলাম বলেন, গত এপ্রিলে সাত লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। হাওড়ে অকালবন্যা, সারাদেশে দুর্যোগ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আশাতীতভাবে বোরো সংগ্রহ করা যায়নি। তাই মজুদ একেবারে কমে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টেন্ডার ও সরকারীভাবে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছি। এখন সন্তোষজনক মজুদ রয়েছে। দিন দিন মজুদ বাড়বে। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসহ সরকারী বিভিন্ন খাতে খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে এক লাখ ২০-২৫ হাজার টন চাল লাগছে। এখন কোনরকম অসুবিধা হচ্ছে না। বৈঠকে খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসেন, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×