ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুলের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা জালিয়াতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

স্কুলের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা জালিয়াতির অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ২৭ সেপ্টেম্বর ॥ সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে ওই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের না জানিয়ে গোপানে অন্য এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আর এই জালিয়াতি করছেন সুকৌশলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ভোলা সদর উপজেলার বিতর্কিত শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। স্কুলের টাকা জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় ভোলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩টি স্কুল থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর জানা গেছে। বুধবার দুপুরে জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, এভাবে স্কুলের টাকা ট্রান্সফার করার কোন বিধান নেই। এ ঘটনায় ভোলা বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিটির সদস্য তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা গরমিল রয়েছে কিনা তা দেখতে ব্যাংকে ছুটছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামানের নানা অনিয়ম কর্মকা- তদন্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে একটি টিম গত ৩ দিন আগে তদন্ত করতে ভোলায় আসেন। ওই তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলামের কাছে প্রথম একটি স্কুলের টাকা স্থানান্তর করে নেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এর পরেই বের হয়ে আসে একে একে বিভিন্ন স্কুলের টাকা জালিয়াতির কাহিনী। সূত্র আরও জানায়, গত বছরের ১ নবেম্বর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান ৩টি পৃথক চিঠি দিয়ে ৮৪নং পৌর বালিকা সরকারী স্কুলের এক লাখ টাকা, রাজাপুর রামদাসপুর সরকারী প্রাথমিক স্কুলের এক লাখ টাকা, জেলা শহরের অফিসারপাড়া সরকারী প্রাথমিক স্কুলের ৪০ হাজার টাকাও তার এ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের জন্য ভোলা সোনালী ব্যাংকে চিঠি দেন। তার পর ৩টি স্কুলের এসটিডি হিসাব থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা তার এ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চিঠির বরাত দিয়ে ৮ নবেম্বর ব্যাংক জমা রসিদের মাধ্যমে ৩টি স্কুলের এ্যাকাউন্ট থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের এ্যাকাউন্টে জমা করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব টাকা বিভিন্ন ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তিনি আত্মসাত করেন। ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, যে কোন বরাদ্দের টাকা স্কুলের হিসাবে একবার জমা হলে ওই টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফেরত নিতে পারেন না। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তারাও দিতে পারেন না। যদি নির্দিষ্ট সময়ে বরাদ্দকৃত উন্নয়নমূলক কাজের টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষ বা কমিটি কোন কারণে খরচ করতে না পারে তা হলে সেই টাকা তারাই ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। ভোলার সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক তাজুল খালিদ জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করেই ওই টাকা স্থানান্তর করে নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার চিঠি দেন। ওই চিঠি পেয়ে তারা প্রথমে আপত্তি জানান। পরে ওই কর্মকর্তা যুক্তি দেখান ওইসব টাকা তার হিসাবের মাধ্যমেই বিভিন্ন সময় দিয়ে ছিলেন। তাই টাকা স্থানান্তর করে নেয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে। এ কারণে ব্যাংক কয়েকটি স্কুলের এসটিডি হিসাব থেকে টাকা ওই কর্মকর্তার এসটিডি ২৪৬ নম্বর হিসাবে স্থানান্তর করে। এদিকে আরও অভিযোগ রয়েছে, ওই উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে উপজেলার ২১০টি স্কুলের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীর উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালে ৫ হাজার টাকা করে সরকারী বরাদ্দ আসে। ওই কর্মকর্তা স্কুলগুলোকে দেন ৪ হাজার ২০০ টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে স্লিপের ৪০ হাজার টাকা করে ২০৬ স্কুলের বরাদ্দের টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই তিন স্কুলের টাকা স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ে খরচ করতে না পারায় তিনি চিঠি দিয়ে ফেরত নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তার দাবি এই কাজ সঠিক। তাই তিনি পরবর্তীতে ওই টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে তা কত তারিখে জমা দিয়েছেন তা বলতে পারেননি।
×