ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের বিরুদ্ধে আজ জিততেই হবে, তারপর শিরোপার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে ভারত-নেপাল ম্যাচের দিকে

কঠিন সমীকরণে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কঠিন সমীকরণে বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ এক নেপালের কাছে হেরেই পাল্টে গেল সব দৃশ্যপট। যেখানে তৃতীয় ম্যাচে জিতলেই চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে কেবল ড্র করলেই বাজিমাত করা যেত, সেখানে এখন জটিল সমীকরণের মারপ্যাঁচে পড়েছে বাংলাদেশ অ-১৮ জাতীয় ফুটবল দল। সাফ অনুর্ধ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে আজ বুধবার মঞ্চস্থ হবে সেই সমীকরণের খেলা। যাতে অংশ নেবে চার দল ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ। লীগ পদ্ধতির এই আসরে আজ অনুষ্ঠিত হবে শেষ দুটি ম্যাচ। যাতে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মোকাবেলা করবে স্বাগতিক ভুটানের (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়)। আর দ্বিতীয় ম্যাচ নেপালের মুখোমুুখি হবে ভারত (সন্ধ্যা ৭টায়)। এই আসরে শিরোপা কে জিতবে এটা বলা খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণটা ওই সমীকরণ... মানে নেপালের কাছে বাংলাদেশের ১-২ গোলে দুভার্গ্যরে হার (এই ম্যাচে বিশ্বনাথ ঘোষ লালকার্ড পেলে বাংলাদেশকে খেলতে হয় ১০ জনকে নিয়ে)। বাংলাদেশের হারে এই মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলে সমান পয়েন্ট বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের। প্রত্যেকেরই পয়েন্ট ৬। তবে বেশি গোল করার সুবাদে ভারত আছে শীর্ষে (৮ গোল)। বাংলাদেশ ও নেপালের গোল পার্থক্য সমান হলেও (+২) নেপালের চেয়ে (৪ গোল) বেশি গোল করার সুবাদে বাংলাদেশ আছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে (৭ গোল)। চার নম্বরে থাকা স্বাগতিক ভুটানেরও পয়েন্ট ৬। তবে গোল তফাতে (-১) এবং গোল করায় (২ গোল) পিছিয়ে থাকায় ৪ নম্বরে আছে তারা। তাহলে এখন ব্যাপারটা কি দাঁড়াল? বাংলাদেশ যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চায় তাহলে তাদের আজ শুধু নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানকে হারালেই চলবে না। তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচটির (নেপাল-ভারত) ফলের দিকেও। সেক্ষেত্রে ৪-৩ গোলে যাদের হারিয়েছিল বাংলাদেশের যুবারা, সেই ভারতেরই শুভকামনা করতে হবে তাদের। ভারত জিতলে বা ড্র করলেই লাভ বাংলাদেশের। কারণ বাংলাদেশ-ভারত দুই দলেরই তখন ৪ ম্যাচে পয়েন্ট হবে ৯। সেক্ষেত্রে কিন্তু শিরোপা নির্ধারণে গোল পার্থক্য বিবেচনায় আসবে না (আসলে অবশ্য ভারতই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত)। বিবেচনায় নেয়া হবে দুই দলের হেড টু হেড লড়াইয়ের ফলকে। আর এখানেই এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। কেননা মুখোমুখি দ্বৈরথে তো বাংলাদেশই হারিয়েছিল ভারতকে। কাজেই বাংলাদেশের জন্য শিরোপা জয় করাটা এখন কঠিন ও অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে তাদের নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে হবে। তারপর সৌভাগ্যের পরশ পেতে হবে। অর্থাৎ আজ অবশ্যই তাদের হারাতে হবে ভুটানকে এবং ভারতের জয় বা ড্র কামনা করতে হবে। তবে আরেকটি ঝামেলাও আছে। বাংলাদেশ যদি ড্র কওে, এদিকে নেপাল-ভারত ম্যাচও যদি ড্র হয় তাহলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের আশা শেষ হয়ে যাবে। কেননা তখন চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ধারিত হবে গোলগড়ের সুবাদে। তখন ভারত চ্যাম্পিয়ন হবে, আর রানার্সআপ হবে বাংলাদেশ। তবে এই আসরে যদি ভুটান চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে যে কোন পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় এটি হবে তাদের জন্য প্রথম কোন শিরোপা জয়। বাংলাদেশ দলের কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি আজকের ম্যাচ নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানান, নেপালের সঙ্গে ম্যাচের ফলটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছিল। কিন্তু আমরা ভবিষ্যতে ভাল ফল করার জন্য ওইদিন কি হয়েছিল তা মনে রাখতে চাই না। আমাদের এখনও চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ আছে। আমাদের বুধবারের ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জিততেই হবে। দয়া করে আমাদের জন্য দোয়া চাইবেন এবং পাশে থাকবেন। আমাদের ছেলেরা দেশের জন্য শিরোপা নিয়ে আসতে কঠিন সাধনা করছে।’ দলীয় অধিনায়ক টুটুল হোসেন বাদশার অভিমত, ‘নেপালের বিপক্ষে আমাদের হারটা দুঃখজনক। কেননা ওই ম্যাচে আমরা অনেকগুলো সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছি। বিশ্বনাথের লালকার্ড আমাদের ব্যথিত করেছে এবং চাপের মুখে ফেলেছে। ভুটানের বিপক্ষে আমরা আগের কোন ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। ভুটানের বিপক্ষে দারুণ একটা জয় চাই, কেননা এখনও আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আছে। আমাদের জন্য দোয়া চাইবেন যেন চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরতে পারি।’ উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এই আসরে (তখন আসরটি হয়েছিল সাফ অ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ নামে) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নেপাল, রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের আসরে অংশ নেয়েনি পাকিস্তান। এছাড়া শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নেয় শ্রীলঙ্কা। ফলে গ্রুপ পদ্ধতিতে খেলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে লীগ পদ্ধতিতে খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন দেখার বিষয়, নিজ সামর্থ্যকে কাজে লাগানো এবং ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে আজ মাহবুব হোসেন রক্সির শিষ্যরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে ও ইতিহাস গড়ে মুখ উজ্জ্বল করতে পারে কি না লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
×