ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণাঞ্চলে পানের দরপতনে দিশেহারা চাষী

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দক্ষিণাঞ্চলে পানের দরপতনে দিশেহারা চাষী

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পানের বাজার নথুল্লাবাদ সেন্টার পয়েন্টে গত বছরেও সপ্তাহ শেষে পান বিক্রি হতো কোটি টাকার ওপরে। চলতি বছর পানের অব্যাহত দরপতনে এ বাজারে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকার পান বিক্রি হচ্ছে। অব্যাহত এ দরপতনে পান চাষী ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছর এ মার্কেটে বড় সাইজের পান প্রতি বিড়া ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও ছোট পানের দর কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এ মার্কেটের আড়তদার দুলাল রায় দুলু জানান, ভারতের এলসি (বড় জাতের হাইব্রিড) পান বাংলাদেশে কম দামে বিক্রি হওয়ায় এ দরপতনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের পান তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করতেন। বর্তমানে বিদেশেতো দূরের কথা দেশের বাজারেই পান বিক্রি হচ্ছে না। এতে করে অর্ধেকেরও কম দামে চাষীরা পান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন পান চাষীরা। এ মার্কেটের সবেচেয়ে বেশি পান বিক্রি করেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকার চাষী মতি লাল। তিনি জানান, তার দুই হাজার পানের বরজ রয়েছে। গত বছরও তিনি এ পাইকারি বাজারে বড় সাইজের প্রতিবিড়া পান ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। প্রতিবিড়া পানের পেছনে বর্তমানে তার ৩৫ টাকার ওপরে খচর হলেও লোকসান দিয়ে তা বাজারে পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এতোগুলো পানের বরজ টিকিয়ে রাখতে পারবেন না বলেও তিনি উল্লেখ করে বলেন, প্রতি হাটে লাভের পরিবর্তে তার লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের টরকী, গৌরনদী, মাহিলাড়া, বাটাজোর, ভুরঘাটা, কোরালিয়া, বোয়ালিয়া, চরমোনাই, সাহেবেরহাট, মুলাদী, উজিরপুরের গুঠিয়া, নারায়ণপুর, বাবুগঞ্জের রহমতপুর, মাধবপাশা, স্বরূপকাঠী ও বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল থেকে এ হাটে ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে তিন শ’ ব্যবসায়ী পান সরবরাহ করে থাকেন। সরাসরি চাষীরাও এ হাটে পান নিয়ে আসেন। আড়ত মালিকরা জানান, এ হাট থেকে ট্রাকযোগে পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে বিগত বছরগুলোতে প্রতি হাটে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার পান দেশের মধ্যে ঢাকা, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, মাধবপুর, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও বিদেশের মধ্যে কুয়েত, দুবাই, সৌদিআরব, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হতো। সবমিলিয়ে এ বাজারে প্রতি সপ্তাহে এক কোটি টাকার ওপরে পান কেনাবেচা হতো। চলতি বছর বিদেশ থেকে কোন অর্ডার আসছে না। ভারতের এলসি পান অবাধে কম দামে বিক্রি করায় এ দরপতনের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের পান চাষীরা লোকসান দিয়ে পান বিক্রি করায় একদিকে যেমন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন তেমনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দাম কমে যাওয়ায় মাগুরার পান চাষীরা বিপাকে সঞ্জয় রায় চৌধুরী, মাগুরা ॥ মাগুরায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পানের বরজ গড়ে উঠলেও উৎপন্ন পানের দাম কমে হওয়ায় পান চাষীরা বিপাকে পড়েছে। এলসির মাধ্যমে ভারতীয় পান আমদানির ফলে পানের দর একেবারেই পড়ে গেছে বলে পান চাষীরা অভিযোগ করেছেন। বরজ থেকে পান কাটা এবং তা হাটে বাজারে অনা বাবদ যে খরচ হচ্ছে পান বিক্রি করে সেই খরচ উঠছে না। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে। জান গেছে, জেলার শ্রীকুন্ঠি, ধরলা, শক্রজিৎপুর, পয়ারী,পথের হাট, শিয়ালজোড়, বাটাজোড়, বেরইল পলিতা, গোয়াল বাথান, মনিরামপুর, পুটিয়া, গঙ্গরামপুর, বরিশাট, আলীধানী, শিবরামপুর প্রভৃতি গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। জেলায় প্রায় ২ হাজার পানের বরজ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রতিপণ ৮০টি পান ১০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পূর্বে এই দাম ছিল অনেক বেশি। জেলার উৎপন্ন পান ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় চালান হয়। প্রতিরাতে কৃষকরা পানের বেড়ি ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করতে যান। বর্তমানে পানের বাজার নিম্নমুখী। দাম একেবারে কম। পানের উৎপাদন মৌসুম এবং এলসির মাধ্যমে ভারতীয় পান আমদানির ফলে পানের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বরজ থেকে পান কাটা এবং তা হাটে বাজারে অনা বাবদ যে খরচ হচ্ছে পান বিক্রি করে সেই খরচ উঠছে না। পান চাষীরা অভিযোগ করেন, এলসির মাধ্যমে ভারতীয় পান আমদানির ফলে পানের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। তারা বলেন, ভারতীয় পান আমদানি না করলে আবার পানের দর বাড়বে। তারা এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বৃহস্পতিবার মাগুরা নতুন বাজার পানের হাটে গিয়ে দেখা যায় আমদানি ব্যাপক কিন্তু দাম একেবারেই কম। ফলে পান বিক্রি করে কৃষক লাভবান হচ্ছে না।
×