ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের শেয়ার দর ২৩ থেকে ১৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ব্যাংকের শেয়ার দর ২৩ থেকে ১৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে লাভজনক সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সুযোগ কমে আসায় গত কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। নতুন এ বিনিয়োগের বড় অংশই যাচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে। এতে এ খাতের কোম্পানিগুলোতে শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত চার মাসে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ২৩ থেকে ১৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ সময়ে পুঁজিবাজারের লেনদেনেও দেখা যাচ্ছে ব্যাংকিং খাতের প্রাধান্য। গত কয়েকদিন ধরে বাজারে মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে ব্যাংকিং খাত ঘিরে। ব্যাংকের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস্ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এটা ঠিক যে, বাজারে কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দাম আয়ের তুলনায় অবমূল্যায়িত ছিল। তাছাড়া খাত হিসেবেও ব্যাংকিং খাতের পিই রেশিও (দাম-আয় অনুপাত) কম ছিল। তাই ব্যাংকের শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়া যৌক্তিক ছিল। কিন্তু সব ব্যাংকের পরিস্থিতি এক রকম নয়। কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে গেছে। এর বড় কারণ ব্যাখ্যা করে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, যারা নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে এসেছেন তাদের মধ্যে কম দামে শেয়ার কেনার প্রবণতা রয়েছে। আর বাজারে সবচেয়ে কম দামে ছিল দুর্বল মৌলভিত্তির ব্যাংকের শেয়ার। ফলে এ ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে যে ব্যাংকগুলোর শেয়ার কম রয়েছে এ ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দামও বেশি বেড়ে গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত চার মাসে বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে রূপালী ব্যাংকের শেয়ারের। এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৮৪ শতাংশ। এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারের দাম প্রায় ৯১ শতাংশ বেড়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৯ শতাংশ। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ। সিটি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া ৫০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে ব্যাংক এশিয়া (৫৭ শতাংশ), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক (৫৭ শতাংশ), ট্রাস্ট ব্যাংক (৫৭ শতাংশ), উত্তরা ব্যাংক (৫৬ শতাংশ), ইস্টার্ন ব্যাংক (৫৩ শতাংশ), এনসিসি ব্যাংক (৫৩ শতাংশ) এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের (৫০ শতাংশ) শেয়ারের। ৪০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (৪৬ শতাংশ), প্রাইম ব্যাংক (৪৫ শতাংশ), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (৪৩ শতাংশ), যমুনা ব্যাংক (৪২ শতাংশ) এবং পূবালী ব্যাংকের (৪১ শতাংশ) শেয়ারের। এর বাইরে এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক এবং সাউথ ইস্ট ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সম্পদ ব্যবস্থাপকরা বলছেন, বাজারে যখনই নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটে তখনই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে উর্ধগতি দেখা দেয়। এর কারণ হলোÑ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে তারা বাজারে এসেই এসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন। ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, গেল আগস্ট মাসে ব্যাংকের শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যা জুলাই মাসে ছিল ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এ হিসেবে আগস্ট মাসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। তাছাড়া বর্তমানে বাজারে লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে। বৃহস্পতিবারে ডিএসইতে ব্যাংক খাতের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যা মোট লেনদেনের ৪৫.২১ শতাংশ। এদিকে আগস্ট শেষে ব্যাংকিং খাতের পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১১। যা জুলাইয়ে ছিল ৯ দশমিক ৫৮। মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক হলোÑ এখানে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকছেন। এতে বাজার গতিশীল হয়ে উঠেছে। তবে শুধু একটি খাতে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকলে তা বাজারের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ এ খাতটিতে দর সংশোধন হলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা।
×