ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুবেল রেহান

পরিবারই সন্তানদের সুশিক্ষিত করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পরিবারই সন্তানদের সুশিক্ষিত করে

অভ্যাসটা অল্প দিনের হলেও বেশকিছু বিষয়ে আমরা আজকাল বেশ অভ্যস্ত। আর তা হলো, ট্যাব বা মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখিয়ে, গান শুনিয়ে বা গেম খেলতে দিয়ে শিশুদের খাওয়ানো। অথচ এতে শিশুটির অসম্ভব ক্ষতি হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন এতে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। আর অভিভাবকরা বলছেন, এসব বিষয়ে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হলে বাচ্চারা এর সুফল ভোগ করতে পারছে না। বাবা-মা শিশুকে সময় দিলে, তার সঙ্গে গল্প করলে, বিনোদনের মধ্যে থাকলে যে বন্ধন গড়ে ওঠে, ফোন বা ট্যাবে ব্যস্ত রাখলে সেটা কখনই সম্ভব নয়। এতে করে ছোটবেলা থেকেই সে একা একা খেলা, কথা বলা, চিন্তা-ভাবনা করা শুরু করে। কোন ঘটনা ঘটলেও তা বাবা-মায়ের কাছে না বলে চেপে রাখার অভ্যাস হয়ে যায় তার। তারপর ধীরে ধীরে একটা সময় অসামাজিক হয়ে পড়ে, তারপর মা-বাবা, পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরে যায় সন্তানটি। এসব দিকভ্রান্ত সন্তানদের কাছে স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবই হয়ে ওঠে সব। অথবা পরবর্তীতে অন্য কোন ব্যক্তি তাকে একটু স্নেহ, ভালবাসা দিলে, ভাল কথা বললে, তার কথা শুনতে চাইলে, সেই ব্যক্তির জন্য জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত হয়ে ওঠে ছেলেমেয়েরা। এমনকি সেই ব্যক্তির কথায় মানুষ খুন করতেও দ্বিধা করে না। অনেক বাবা মা তাদের ছোট্ট সন্তানের জন্য ট্যাব কিনে দেন। অথচ এই সোনালি দিনগুলো হাস্যোজ্জ্বল রাখার দায়িত্ব বাবা মায়ের। সন্তানের এই বয়সটা বাবা-মায়ের ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার। এই বয়সে বাবা-মা সন্তানের মনে জাগিয়ে রাখবেন নীতি নৈতিকতার আদর্শ চর্চা। সঠিক জীবন যাপনের পথ বেছে দেবেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবলি সেন্টার ফর কারেক্টও এন্ড ভার্চুসের এক প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী সন্তান আছে এমন ১ হাজার ৭০০ অভিভাবকের ওপর এক গবেষণা জরিপ চালানো হয়। গবেষণার বিষয় ছিল বাচ্চাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অভিভাবকদের মতামত। ৫৫ শতাংশ অভিভাবকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন। চলতি বছরের শুরুতে বিবিসির এক গবেষণার ফলাফল ছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ্যাকাউন্ট খোলার সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর হলেও ১০ বছর বয়সেই খুলেছে অনেকে। জরিপে অংশ নেয়া অভিভাবকদের শতকরা ৯৩ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন। তবে এখানে এসব অভিভাবকদের ধারণা, ফেসবুকের মতো সাইটগুলো তরুণদের চরিত্র গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উঠতি বয়স সব সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। বাবা-মা বাদে অন্য কারও মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে কোন সন্তান যদি এসব চ্যালেঞ্জের সুযোগ পায়, সামাজিক অঘটন ঘটানোর উপকরণ পায় তবে বেশিই আগ্রহ বোধ করে। বাবা-মা টের পাওয়ার আগেই হয়ত সন্তানটি মিশে যায় অন্ধকার জগতে। বড় কোন ঘটনা ঘটার পর পরিবারে তখন কিছুই করার থাকে না। আর তাই তো শিশুরা আবেগহীন, অসামাজিক হয়ে ওঠার আগে তার মধ্যে যে আবেগ জাগিয়ে তুলতে পারেন একমাত্র মা-বাবাই।
×