ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের বিনিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে ॥ ফরাসউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দেশের বিনিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে ॥ ফরাসউদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, দেশের বিনিয়োগ কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ‘দারিদ্র্য নির্মূল উন্নয়নের মডেল’ থেকে এখন বেরিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে। আগামীতে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নভিত্তিক অর্থনীতির। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে মানুষের আয়-রোজগার বাড়বে, ফলে দারিদ্র্য এমনিতেই কমবে। অধিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে বৈষম্যও কমতে পারে। এক্ষেত্রে ন্যায় ও সমতাভিত্তিক উন্নতি (গ্রোথ উইথ ইক্যুইটি) নিশ্চিত করতে হবে। শনিবার বিকেলে ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে দশমবারের মতো আয়োজিত ‘মিসবাহউদ্দিন খান স¥ারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইতিহাসবিদ, প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও সমাজকর্মী মিসবাহউদ্দিন খানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মুনতাসীর মামুন ফাতেমা ট্রাস্ট এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এবার বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক রূপান্তরে জনকল্যাণÑ কোন পথে বাংলাদেশ’। শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন খান আলমগীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজক ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সভাপতির বক্তব্যে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, একটা শ্রেণী সবসময়ই ভয় পাইয়ে দিতে চায়। তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ভয় পেলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ভয় পেলে বাংলাদেশ এতদূর আসতে পারত না। বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। যারা তাড়াতাড়ি উন্নতি চায় সতর্ক থাকতে হবে তাদের ব্যাপারেও। তাড়াতাড়ি উন্নতি করতে চেয়ে তারা দেশের কতবড় ক্ষতি করেছে ইতিহাস সাক্ষী। এরআগে প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তৃতায় ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশ ভূ-খ-ের আর্থ-সামাজিক ইতিহাস, ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান আমলের বৈষম্য, স্বাধীন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চমৎকার এবং এর ফলে সৃষ্ট সামাজিক রূপান্তর চিত্তাকর্ষক। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের রফতানি ছিল মাত্র ৩৫ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এটি ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতো ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা পদ্মা সেতু করছি। মেট্রোরেলের কাজ করছি। মাথাপিছু জিডিপিতে আমরা পেছনে ফেলেছি পাকিস্তানকে। নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের মতে সামাজিক বিভিন্ন সূচকে আমাদের অর্জন বিস্ময়কর। যদিও ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে বড়। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ইদানীং ’আমিত্ব’ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এই অহেতুক বিতর্ক বন্ধ করতে হবে। যারা এই বিতর্ক করছেন তারা ছয় দফা ভাল করে পড়েননি। ৭ মার্চের ভাষণে ‘আমি’ যদি হুকুম দিবার না পারি... বা ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা, এটাই হয়তো ‘আমার’ শেষ কথা... এই বিষয়গুলো ভুলে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো নাÑ এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকা উচিত না। ফরাসউদ্দিন বলেন, গত আট বছরে সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। গৌরবান্বিত হওয়ার অনেক অর্জন হয়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। তারপরও কিছু বিষয়ে গভীর মনোযোগ দরকার। তিনি বলেন, এখন দেশে উন্নয়নের যে বিনিয়োগ তার শতকরা ৮০ ভাগ প্রাইভেট সেক্টরে, পাবলিক সেক্টরে মাত্র ২০ ভাগ। এটি সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো অবকাঠামো সৃষ্টি করা। পাবলিক সেক্টর বিকশিত হলে ছায়াতলে ব্যক্তিখাত প্রসার লাভ করবে। পাকিস্তান আমলে আমরা কোটিপতি ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। এখন বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ হাজার লোক কোটিপতির খাতায় নাম লেখাতে পারছে। কাজেই এখানে বৈষম্যের একটা ব্যাপার আছে। বঙ্গবন্ধুর সময় বাংলাদেশে যিনি সহগ (আয় বা সম্পদ বণ্টনের অসমতা প্রকাশের সমীকরণ যা ০-১ এর মধ্যে প্রকাশ করা হয়) ছিল শূন্য দশমিক ৩৪। ২০০৫ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৮। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মূচীর কারণে এটি কমে বর্তমানে শূন্য দশমিক ৪৫ হয়েছে। এটি শূন্য দশমিক ৪০ নামিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণের কোন বিকল্প নাই। বাংলাদেশে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বার্ষিক আয় ৪ হাজার মার্কিন ডলার বা ৩ লাখ ২০ হাজার যা করযোগ্য আয়। অথচ আমাদের নিবন্ধিত করদাতা মাত্র ১৫ লাখ। এই ব্যর্থতা শুধু করদাতাদের নয়, যারা কর আদায় করেন তাদেরও সমস্যা আছে।
×