ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব বিবেক সোচ্চার ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিশ্ব বিবেক সোচ্চার ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব বিবেক এখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে সাময়িকভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে আশ্রয় দিয়েছেন ও মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। বিশ^ বিবেক এখন শেখ হাসিনাকে বলছে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। শনিবার বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম রচিত ৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহিম হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। লেখকের বইগুলো হচ্ছে-বঙ্গবন্ধুর মর্মকথা (২য় খ-), আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জ¦ালানি খাতের ভূমিকা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, চলমান অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য এবং সমসাময়িক সাধারণ জ্ঞান। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। গণহত্যা চালানো হচ্ছে মিয়ানমারে। গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দিয়ে, মানুষ হত্যা করা হচ্ছে এবং তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের দেশ থেকে। তবে এ ঘটনা বিশ^ বিবেককে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি তাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করছেন। এ কারণে বিশ^ বিবেক শেখ হাসিনাকে বলছে মাদার অব হিউম্যানিটি বা মানবতার মা। যুক্তরাজ্যের চ্যানেল-৪ টিভিতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, অথচ দেশে বিএনপি প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে। দলটির নেতাকর্মীরা অন্যায়ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সমালোচনা, মিথ্যাচার ও বিষোদগার করছেন। অথচ এ সঙ্কটময় মুহূর্তে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার খরব নেই, তিনি হারিয়ে গেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে এখন গণহত্যা চলছে। তবে বিশ^বাসী মিয়ানমারের এ গণহত্যার নিন্দা করছে। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকল দেশের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে উখিয়া ও টেকনাফ পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘ গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাই অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করা হোক, রোহিঙ্গাদের নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে নেয়া হোক। তিনি বলেন, আসন্ন সংসদ অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদানের জন্য সেখানে গেছেন। বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপে বিশ^বাসী সন্তুষ্ট, আর আমাদের দেশের বিএনপি অসন্তুষ্ট। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তারই যোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি বিশ^বাসীর জন্য অনুকরণীয়। দেশের কৃষক মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে সরকারের সহায়তা গ্রহণ করছেন। কৃষক এখন আর কোন ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। জ¦ালানি খাতে দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়া হচ্ছে। দেশে এখন ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, দেশের রফতানি বাড়ছে। নতুন নতুন রফতানি পণ্য এবং বাজার সৃষ্টি করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এফটিএ করা হচ্ছে এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য সমীক্ষা পরিচালনা করছে সরকার। বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতেই বিভিন্নভাবে দেশী-বিদেশী তৎপরতা চলছে। অনুষ্ঠানে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনে। প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যে জননীতি বাস্তবায়ন করছেন তাতে দ্রুত গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মহীউদ্দীন খান প্রশ্ন রেখে বলেন, ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবন ভেঙ্গে ফেলতে হবে কাদের স্বার্থে? এটি ভাঙ্গলে তো পাশের সোনারগাঁ হোটেল ও এফডিসিসহ অন্যান্য স্থাপনাও ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, যে জাতি মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছিল, সে জাতি মিয়ানমারের লাখ লাখ শরণার্থীকে এখন আশ্রয় দিয়েছে। তবে যথাসময়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। এমএ মান্নান বলেন অর্থনীতি, সমাজনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ সব কিছুতেই আমরা পাকিস্তানকে হারিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আর এমন কোন বিষয় অবশিষ্ট নেই যে, তাদেরকে আমরা ছাড়িয়ে যাইনি। বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু মানেই মুক্তিযুদ্ধ। অথচ ২০০১ এবং এর আগে ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন ইতিহাস বিকৃতির চর্চা শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কমিয়ে আনতে আনতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। জিয়াউর রহমান তো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানুষ হত্যাকারী। এই জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের বড় বিরোধিতাকারী পাকিস্তানী রাজাকার গোলাম আযমকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং চারনেতা হত্যাকা- দেশে সংঘটিত হয়। এসবই ছিল তাদের পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভাতা বাড়ানোসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ে আলোচনা চলছে আরও আলোচনা হবে।
×