ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আল আমিন বাবু, লস এ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে

ক্রিকেটের মাধ্যমে আমেরিকায় শেখ কামাল স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ক্রিকেটের মাধ্যমে আমেরিকায় শেখ কামাল স্মরণ

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টাইগারদের টেস্ট ম্যাচ নিয়ে সারাদেশ যখন উত্তেজনা ও আনন্দে ভাসছিল ঠিক তখনই উত্তর আমেরিকার সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করল ’লেবার ডে’ এর হলিডের টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট। এই আসর অনুষ্ঠিত হলো শহীদ শখ কামাল স্মরণে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন বা ‘এস,সি,সি,এ’ এই প্রতিযোগিতা উৎসর্গ করে শেখ কামাল মেমোরিয়্যাল ইউ.এস.এ ওয়েস্টার্ন রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ নামে। এটি নর্থ আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে লস এঞ্জেলেসের উডলি পার্কে। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই খেলে থাকে। এই পার্কটি মোট চারটি ক্রিকেট মাঠে সাজানো। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন প্রতিবছরই এই সময়ে ম্যাচটি আয়োজন করে থাকে, যা শেখ কামালের নামে পেল এক ভিন্নমাত্রা। তাদের এবারের আয়োজনে ২ থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মোট ছয়টি টিমের মধ্যে তিনটি মাঠে একই সময়ে এই প্রতিদ্বন্ধিতা অনুষ্ঠিত হয় । উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে কোয়ালিফাই হয়ে আসা টিমগুলোর মধ্যে ছিল নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন, সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন, ইউটাহ, কলোরাডো, সিয়াটল ও আরিজোনা ক্রিকেট টিম। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হয়েছে নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন ও রানার্সআপ সিয়াটেল টিম। ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে উত্তর আমেরিকার সাউদার্ন ক্যালিফোর্ণিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশনের পক্ষে আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বিজয়ী ও বিজিত টিমদের ট্রফি তুলে দেন । সমাপনী অনুষ্ঠানে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন ও অন্যা টিমের কর্মকর্তাসহ লস এঞ্জেলেস বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল পরিতোষ সাহা ও ডাক্তার রবি আলম উপস্থিত ছিলেন । প্রচন্ড গরমের মধ্যেও অনেক দর্শকদের ভিড়ে লস এঞ্জেলেসে বসবাসকারী বাঙালী আমেরিকানদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের কোন টিম এই টুর্নামেন্টে অংশ না নিলেও সেখানে বাঙালিদের চেহারায় ফুটে উঠেছিল এক বিজয়ের আভা, যা ছিল আমেরিকার বুকে শেখ কামালের কৃতিত্বেরই স্বীকারের আনন্দ । ৩২ বছর ধরে লস এঞ্জেলেস নিবাসী মোবারক হোসেন জানালেন,” আমি একজন অসুস্থ মানুষ। ক্রিকেট বোদ্ধা নই, তবু ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট গরম উপেক্ষা করেও মাঠে ছুটে এসেছি শুধুমাত্র শেখ কামালের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করতে । সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন যে সন্মান আজ শেখ কামালকে দিলো এতে আমরাও সম্মানিত হয়েছি। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট এসোসিয়েশন চেয়ারম্যান ও আসরের কো-অর্ডিনেটর সৈয়াদ নাজীম সিরাজীর কাছে প্রশ্ন ছিল, কেন তারা ইউ এস এ ওয়েস্টার্ন রিজিওনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি শেখ কামালের নামে উৎসর্গ করলেন ? উত্তর- আমাকে ডাক্তার রবি আলম প্রায় দুই বছর আগে এই প্রস্তাব প্র্রথম দেন। এরপর থেকে আমরা একজন ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামালের কর্মের অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা পাই তাতে আমি নিজেও বিস্মিত হই এই ভেবে যে, জাতির পিতার সন্তান হয়ে তিনি রাজনীতিতে না জড়িয়ে তৎকালনি সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দেশের যুবসমাজের দিকেই নজর দিয়েছিলেন।তিনি আবাহনী নামে একটা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ফুটবলের সঙ্গে ক্রিকেটকেও সফলভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন । যার ফল আজ বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট টিম ভোগ করছে। শুধু তাই নয় তিনি স্পন্দন নামক একটা সংগীত গোষ্ঠীও তৈরী করেছিলেন যেখান থেকে জন্ম নিয়েছিল অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী যা তখনকার প্রজন্মকে দিয়েছিলো এক নতুন উদ্দীপনা । তিনি একটা দেশের মুলশক্তি নবীনদের ক্রীড়া ও সংস্কিতিতে উজ্জীবিত করে তাদের সামনের দিকে হাঁটার পথ করে দিয়েছিলেন। যা আমাকে সত্যি মোহিত করে।আর আমি তা সফল ভাবেই উপস্থাপন করতে পেরেছিলাম আমাদের এসোসিয়েশন নীতিনির্ধারকদের কাছে। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি যে দেশ গড়ার কাজে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে সেটাই সম্পূর্ণভাবে ফুটে উঠেছিল শেখ কামালের স্বল্পকালীন বর্নাঢ্য জীবনে।আর এ কারণেই এস,সি,সি,এ শেখ কামালের মতো একজন সংগঠককে সম্মানিত করে নিজেরাই সম্মানিত হয়েছেন। আমি ধন্যবাদ দেই ডাক্তার রবি আলমকে যিনি এই টুর্নামেন্টটি সফল করার জন্য তার ব্যক্তিগত স্পন্সর, সময় ও বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন। এক কথায় স্বপ্নটি ডাক্তার রবি আলম দেখেছিলেন, যা আমরা আজ বাস্তবায়ন করলাম। ১৯৯৮ সাল থেকে লস এঞ্জেলেস নিবাসী লস এঞ্জেলেস গ্লেনডেল এডভ্যান্টিস হসপিটালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডক্টর রবি আলম তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ছোটবেলায় শেখ কামালের নামে কিছু অপবাদ শুনতাম যা বড় হয়ে জানলাম এগুলো ছিল ডাহা মিথ্যা। যা ছিল শুধুই জাতির পিতার হত্যাকা-কে স্বীকৃতি দেবার একটা অপচেষ্টা। এটা আমাকে সবসমই ভাবিয়ে তুলতো, আর সেখান থেকেই শেখ কামালকে তার নিজের গুনে মূল্যায়িত করার একটা ইচ্ছা সব সময়ই আমার মনের ভিতরে কাজ করত। সেই ইচ্ছার বাস্তবায়নই আজকের টুর্নামেন্টে তার নামটি জড়িয়ে দেয়া। প্রশ্ন করলাম, ‘ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট্ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে কেন সংগঠনের বাইরে নিজ উদ্যোগে এই কাজটি করতে হলো? উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখেন বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান হয়েও তিনি তাকে রাজনীতির সাঙ্গে না জড়িয়ে নিজ উদ্যোগে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে করেছিলেন সম্ভার। তারপরও তিনি মিথ্যা অপবাদ থেকে রেহাই পাননি, অর্থাৎ রাজনীতির কুটিলতা তাকেও ছাড়েনি। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজটি করি। তবে এই কাজে আমাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী মহিলা লীগ ছাড়াও স্বাধীনতার পক্ষের কমিউনিটির ক্রীড়া প্রেমিক বিশিষ্টজনদেরও সাহায্য পেয়েছি। এই কাজ করতে গিয়ে আপনি কোন ধরনের বাঁধার সন্মুখীন হয়েছিলেন কিনা? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন। দেখুন আমাদের দুর্ভাগ্য যে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লক্ষ্য জীবনের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে পাওয়া এই বাংলাদেশের ভিতরে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি আজও বর্তমান। যা আমাদের এখানেও রয়েছে, কিছু বাধাও এসেছে, আমাকে নিয়েও প্রোপাগান্ডা হয়েছে। কিন্তু একজন টার্গেট ওরিয়েন্টেড মানুষ হিসেবে আমি কখনোই এসব বাধাকে পাত্তা না দিয়ে আমি আমার নিদৃষ্ট লক্ষ্যেই স্থির ছিলাম। আমি সময় নিয়ে স্থিরতার সঙ্গেই এগিয়েছি, যা আমাদের জন্য এই সাফল্য বয়ে এনেছে। শেষ প্রশ্নের উত্তরে এক সময়ের বাংলাদেশ টিমের ওপেনিং ব্যাটসম্যান বর্তমানে এসসিসিএ এর চেয়ারম্যান সৈয়দ নাজীম সিরাজী জানালেন যে, তারা ভবিষ্যতে প্রতিবছরই এই টুর্নামেন্টটি করার উদ্যোগ নেবেন, যেখানে তারা বাংলাদেশের জাতীয় টিমকেও আমন্ত্রণ জানাবেন।
×