ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আজ রোহিঙ্গা ইস্যু ও কাল রায় বাতিল নিয়ে সংসদে আলোচনা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আজ রোহিঙ্গা ইস্যু ও কাল রায় বাতিল নিয়ে সংসদে আলোচনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ দেশের বর্তমান দুই আলোচিত ইস্যু সর্বোচ্চ আদালতের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া কিছু পর্যবেক্ষণ এবং মিয়ানমার থেকে ¯ স্রোতের মতো রোহিঙ্গা প্রবেশ নিয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনা ও প্রস্তাব গৃহীত হবে। সেক্ষেত্রে আজ সোমবার রোহিঙ্গা ইস্যু এবং আগামীকাল মঙ্গলবার ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সংসদে সরব আলোচনা হতে পারে। রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই এ দুটি ইস্যুতে সাধারণ আলোচনার জোরালো দাবি ওঠে। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হলে সরকার দলীয় প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মিয়ানমার ইস্যু এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের দাবি জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। এ দুটি ইস্যুতে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই। এটা নিয়ে সংসদে সাধারণ আলোচনা হওয়া উচিত। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্ট ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তা দেশ ও জাতিকে বিস্মিত করেছে। এটা আমরা সংসদে তুলে ধরতে চাই। তাই বিষয়টি দুটি নিয়ে নোটিস দিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামীকাল (সোমবার) রোহিঙ্গা এবং পরদিন মঙ্গলবার ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে এই সাধারণ আলোচনা হতে পারে। জবাবে স্পীকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পীকার বলেন, বিষয়টি বিবেচনা করে স্পীকার সংসদ নেতার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেখানে আপনারা যে প্রস্তাব দেবেন এবং নামের তালিকা দেবেন, সেই অনুযায়ী আলোচনা হবে। এর আগে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা প্রবেশ নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বিবেক জাগ্রত। আর এক পশুশ্রেণী মানুষের তা-বে আমরা হতবাক। পার্শ¦বর্তী দেশ মিয়ানমার। এটা এক সময় ছিল আরাকান স্বাধীন রাজ্য। কালের পরিক্রমায় আবার পরাধীন হয়ে যায়। সেখানে মুসলমানরা থাকেন। সেই মুসলমানদের ওপর বার বার আঘাত করা হচ্ছে। একথা বলার পরই ডেপুটি স্পীকার তার মাইক বন্ধ করে বলেন, আপনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের বিবেক জাগ্রত। আপনি জাগ্রত মানুষের পক্ষে। তাই যদি বিধি অনুযায়ী রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করতে একটা নোটিস দেন। নিশ্চয়ই সেটা গ্রহণ করা হবে। এখানে ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারে, যেটার ওপর একটি রেজুলেশন এডাপ্ট ( প্রস্তাবনা গ্রহণ) হতে পারে। অন্যথায় শুধু এই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে কালক্ষেপণ করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। স্পীকারের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের বৈঠক ॥ এদিকে এই দুটি ইস্যুতে সংসদে আলোচনার কৌশল নির্ধারণে রবিবার রাতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে তার সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সিনিয়র নেতারা। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ কয়েক সংসদ সদস্য এ ব্যাপারে স্পীকারের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় নিয়ে সংসদে সাধারণ আলোচনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। তারা এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। তবে ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সে ব্যাপারে কোন পক্ষই মুখ খুলেননি। সংসদে তিনটি নতুনবিল উত্থাপিত জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রবিবার তিনটি নতুন বিল উত্থাপিত হয়েছে। বিল তিনটি হচ্ছে- বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বিল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৭। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রাতে অধিবেশনে বিল তিনটি উত্থাপন করেন যথাক্রমে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিল তিনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বিলের উদ্দেশ্য পূরণে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্টারপ্রাইজেস (ন্যাশনালাইজেশন) আদেশ ১৯৭২ এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস কর্পোরেশন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এমনভাবে বহাল রাখার বিধানের প্রস্তাব করা হয়, যেন তা প্রস্তাবিত বিলের বিধানের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিলে প্রত্যেক কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত থাকবে বলে প্রস্তাব করা হয়। বিলে একজনকে চেয়ারম্যান করে সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত অন্যূন ৬ পরিচালকের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এ পরিচালনা পর্ষদ কর্পোরেশনের সকল কার্য সম্পাদন ও এর সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। জাতীয়করণকৃত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিলের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনে আপত্তি করলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
×