ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেডের সভাসামনে রেখে কার্যপত্র তৈরি করা হচ্ছে

ভারতের সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের কৌশল নির্ধারণ চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভারতের সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের কৌশল নির্ধারণ চেষ্টা

এম শাহজাহান ॥ ভারতের সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে শুল্ক-অশুল্কজনিত যেসব বাধা রয়েছে তা দূর করে রফতানি বাড়াতে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশটির ঋণ সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হবে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ‘বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড’-এর ১১তম সভা সামনে রেখে কার্যপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এবারের সভায় তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো- আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পরও ভারতে পোশাক রফতানি বাড়েনি। এমনকি বড় অঙ্কের যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না বাংলাদেশ। এ কারণে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে জোর দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) কার্যকর এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে ভুটান ছাড়া বাকি তিনটি দেশ বিবিআইএন দ্রুত কার্যকর চায়। গত কয়েক বছর ধরে পাটপণ্য রফতানিতে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করছে ভারত। এতে বিভিন্ন সময় পাটপণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারে বাংলাদেশের যৌক্তিক অবস্থান তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১২ প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই অবকাঠামো সমস্যা। বাংলাদেশ সরকার এসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা ও দিল্লীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে যেসব ইস্যু বাধা হিসেবে কাজ করছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বুড়িমারী-চেংড়াবান্ধা ও তামাবিল-ডাউকি স্থলবন্দরের দুর্বল অবকাঠামো, ঢাকা-গৌহাটির মধ্যে দ্রুত বিমান সার্ভিস চালু না করা, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নৌ প্রটোকলের আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদে এখনও পোর্ট অব কল স্থাপন না করা, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়া, কোস্টাল শিপিং পুরোপুরি চালু না করা ও অধিকসংখ্যক বর্ডার হাট স্থাপন না করা, শুল্ক-অশুল্কজনিত সমস্যা, সহজে ভিসা না পাওয়া প্রভৃতি। এদিকে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৪১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূলে নয়। ভারতের সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের আওতায় এ বাণিজ্য ঘাটতি দ্রুত কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে সেই অর্থে বাণিজ্য বৈষম্য বা ঘাটতি তেমন কমেনি। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ছে। কিন্তু আমাদের ঘাটতি কমছে না। শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় রফতানি বাড়িয়ে বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। এদিকে, গত কয়েক বছরে ভারতীয় বিনিয়োগ দেশে সেই অর্থে বাড়েনি। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানে ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, একক ও যৌথ মালিকানায় ভারতীয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৬টি কৃষিভিত্তিক শিল্পে, খাদ্য শিল্পে ৬, টেক্সটাইল শিল্পে ৩৫, প্রিন্টিং, পাবলিশিং ও প্যাকেজিংয়ে ৭, ট্যানারি ও রাবারে ৩, রাসায়নিক খাতে ৫৪, গ্যাস ও সিরামিকসে ৪, প্রকৌশল খাতে ৩৬ এবং সেবা খাতে ৫৯ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ এসেছে। যদিও ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ, টাটা, বিড়লা ও মিত্তাল ব্যবসা সম্প্রসারণে অন্য দেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। অথচ প্রতিবেশী বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের চিত্র সন্তোষজনক নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভারতীয় মালিকানাধীন ৬২ প্রতিষ্ঠান মাত্র ২১ কোটি ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানায় ১৬৮ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ভারতের ২৩০টি প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ মাত্র ৫৯ কোটি ডলার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার এখনই সময়। এজন্য বাংলাদেশে অনেক বেশি ভারতীয় বিনিয়োগের প্রয়োজন। এটি হলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা সহজ হবে। তিনি বলেন, শূন্য শতাংশ শুল্ক সুবিধায় ভারতে পণ্য রফতানির সুযোগ পাওয়া গেছে। এ সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশে যথেষ্ট বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের। তাদেরও এ সুযোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, ‘বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড’-এর ১০ম সভায় বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত, বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল বন্ধুপ্রতিম দেশটি। ওই ঋণ দিয়ে বর্তমানে ১৫ প্রকল্প চলমান।
×