ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারক প্রেমিকার সন্ধানে এসে খুন হলো প্রেমিক

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রতারক প্রেমিকার সন্ধানে এসে খুন হলো প্রেমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ৮ সেপ্টেম্বর ॥ নাটোরের লালপুরের কদমচিলান ইউনিয়নের দাঁইড়পাড়া গ্রামের প্রতারক সুন্দরী প্রেমিকা সাগরী খাতুনের (২৫) সন্ধানে এসে প্রেমিকার বাবা ও ভাইয়ের মারপিট ও নির্যাতনে কাউছার হোসেন (৩৫) নামে প্রেমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বেধড়ক মারপিটের কারণে কাউছার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তার মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা চালায় ওই প্রেমিকা ও তার পরিবারের লোকজন। বুধবার রাতে মারপিটের ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রেমিক কাউছার। নিহত কাউছার বরিশালের বাকেরগঞ্জের রিয়াজুল মির্জার ছেলে। তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে কাভার্ডভ্যানচালক হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার পর থেকেই প্রেমিকা ও তার পরিবারের লোকজন গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে এ ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। জানা গেছে, লালপুরের কদমচিলান ইউনিয়নের দাঁইড়পাড়া গ্রামের শাহিনুর ফকিরের মেয়ে প্রতারক প্রেমিকা সাগরী খাতুন স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গ্রাম্য বিচার-সালিশে তাদের ছাড়াছাড়ি হলে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি নেয়। সেখানে কাভার্ডভ্যানচালক কাউছারের সঙ্গে সাগরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং বিয়ে না হলেও তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে প্রায় দুই বছর একত্রে বসবাস করছিল। কিন্তু সম্প্রতি তাদের মধ্যে সম্পর্কে চির ধরলে গত বুধবার সকালে সাগরী তার ভাই নাহিদ হোসেনের সহযোগিতায় আশুলিয়ার বাসা থেকে ট্রাকযোগে কাউছারের সব আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ও নগদ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে বাড়ি চলে আসে। পরে বাসায় সাগরীকে না পেয়ে তাকে খুঁজতে নাটোরের লালপুরের কদমচিলান ইউনিয়নের দাঁইড়পাড়া গ্রামে সাগরীর বাড়িতে এসে হাজির হয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাগ্বিত-ার একপর্যায়ে সাগরীর বাবা ও ভাই মিলে কাউছারকে বেধড়ক মারপিট করে। নির্যাতনের কারণে কাউছার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে সাগরী ও তার পরিবার। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে মারা যান প্রেমিক কাউছার। স্থানীয়রা আরও জানায়, প্রায় আট বছর আগে বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের লাথুরিয়া গ্রামের দর্জি ফারুক হোসেনের সঙ্গে সাগরী খাতুনের বিয়ে হয়। সেখানে তাদের একটি মেয়ে হয়। বিয়ের পর সাগরী বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। পরে স্থানীয় বিচারে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ও মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটায়। পরে সাগরী বাবার বাড়িতে এসে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের অভিনয়ে প্রতারণার ফাঁদ ফেলে টাকা আয় করতে থাকে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপে সাগরী ঢাকার আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। আমেনা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আনছারুল্লাহ জানান, কাউছার হোসেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও কাটাচিহ্ন ছিল বলেও জানান তিনি। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবু ওবায়েত জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেবে না বলে জানান তিনি।
×