ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম টেস্ট

বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিল অসি ব্যাটসম্যানরা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিল অসি ব্যাটসম্যানরা

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ রোদকরোজ্জ্বল উত্তপ্ত চট্টগ্রাম। উইকেট শুকনো, খটখটে হয়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠছিল। তাই প্রথমদিনে ৬ উইকেটে ২৫৩ রান করলে আরও বড় সংগ্রহের স্বপ্ন বুনেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের ভুলে সেই প্রত্যাশা আলোর মুখ দেখেনি। আর ৫২ রান যোগ করতেই দ্বিতীয়দিন মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ৩০৫ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস হিসেবে তবু হয়তো আক্ষেপটা ছিল না। আক্ষেপ বাড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। তিন অর্ধশতকে ভর দিয়ে দ্বিতীয়দিন শেষে ২ উইকেটে ২২৫ রান তুলে বেশ শক্ত অবস্থানেই আছে আপাতত অস্ট্রেলিয়া। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথমদিন যেখানে অসি ডানহাতি অফস্পিনার নাথান লিয়ন ৭ উইকেট শিকার করলেন সেখানে প্রায় আড়াই সেশনে ৬৪ ওভার বোলিং করেও তেমন কিছুই করতে পারেননি বাংলাদেশের স্পিনত্রয়ী। এ কারণে দিনশেষে নাসির হোসেন জানালেন ৮০ রানে এগিয়ে থাকলেও কিছুটা ব্যাকফুটে বাংলাদেশ দল। পুরোপুরি ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে বোলারদের কিছু করার নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি। আর সে কারণেই ভয়াবহ একটি অগ্নিপরীক্ষার দিন গেছে বাংলাদেশের বোলারদের। লিয়ন ম্যাজিক দেখিয়েছেন নাকি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভুল করে উইকেট দিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয়দিন শেষে মঙ্গলবার সাগরিকায় চলমান দ্বিতীয় টেস্টের আলোচনায় উঠে আসল বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং। সেটাকে টেবিলে এনেছে মূলত ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ ও পিটার হ্যান্ডসকম্বোর স্থিতিশীল, সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্যে খেলা তিনটি ইনিংসের কারণেই। তিনজনই অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশী বোলারদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ ওয়ার্নার ৮৮ রানে এখন পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকা। দুটি জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি ৫২ ও ৭৩ রানের সময়। তাইজুল ইসলামের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রথমবার মুমিনুলকে, তিনি পারেননি মুঠোবদ্ধ করতে। আর ৭৩ রানের সময় মেহেদি হাসান মিরাজের বলে উইকেট ছেড়ে অনেক দূর বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন। সেটা মুশফিক ধরতে পারলে নিশ্চিত স্টাম্পিং হতেন ওয়ার্নার। এ বিষয়ে নাসির বলেন, ‘ধরতে পারলে দিন শেষে অবশ্যই ব্যাপারটা অন্য রকম হতো। ওদের তিন উইকেট পড়ে যেত।’ সেটা হয়নি ক্যারিয়ারের ২৫তম ফিফটি করে এদিন ধীরস্থির ওয়ার্নার এখন পর্যন্ত অপরাজেয়। তাকে যথাযথ সঙ্গ দিয়ে একেবারেই দ্বিধাহীন, বাধাহীনতায় খেলে পিটার হ্যান্ডসকম্বো ৬৯ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। এখন পর্যন্ত তৃতীয় উইকেটেই ১২৭ রান যোগ করেছে অসিরা। কিন্তু তাদের ইনিংসের শুরুতেই বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। মিরপুর টেস্টে ঐতিহাসিক বিজয়ের ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকলেও এদিন ওপেনার ম্যাট রেনশকে (৪) ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দেন। চলতি টেস্টে কোন পেসারের প্রথম উইকেট ছিল সেটা। অথচ উইকেট ফ্ল্যাট হয়ে ব্যাটিং উপযোগী হয়ে পড়ায় ভুল না করলে কোন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরানো দুঃসাধ্য বোলারদের জন্য। সেই সাফল্যটা ঢাকা পড়ে যায় স্মিথ-ওয়ার্নারের দ্বিতীয় উইকেটে ৯৩ রানের দারুণ জুটিতে। ইনিংসের ২৯তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই আঘাত হেনে ৫৮ রান করা স্মিথকে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। সাফল্য এ দুটিই। শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে ২২৫ রান তুলে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে গেছে অসিরা। যদিও ৮০ রানে পিছিয়ে তারা। এ বিষয়ে নাসির বলেন, ‘আমরা এখনও ৮০ রানে এগিয়ে আছি। ক্রিকেট এমন একটা খেলা এখানে আপনি কিছুই বলতে পারবেন না। আমরা একটু ব্যাকফুটে আছি। টেস্টে এক-দেড় ঘণ্টায় অনেক কিছু বদলে যায়। বোলাররাও খারাপ করে নাই। আপনারা যদি দেখেন যে, ওয়ার্নার এতো ধীরে ব্যাটিং করে না। কিন্তু আজ করেছে, মানে আমরা বোলিং ভাল করেছি। শুধু উইকেট পড়েনি।’ হ্যাঁ. এখন পর্যন্ত ৮টি উইকেট জিইয়ে রেখেছে অসিরা। তাদের লক্ষ্য আরও বড় সংগ্রহ গড়ে টাইগারদের কোণঠাসা করে ফেলার। অবস্থার উন্নতি করতে এই উইকেটগুলো দ্রুতই নিতে হবে বাংলাদেশের বোলারদের। সাগরিকার উইকেট কি সে সুবিধা দেবে বাংলাদেশী স্পিনারদের? ভাল বোলিং করার যে দাবি নাসিরের তা পুরোপুরিই সান্ত¡নার কথা। আসল কথা হচ্ছে ৬ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে দ্বিতীয়দিনে দেড় ঘণ্টা ব্যাট করেই ৩০৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। আগেরদিন মুশফিক ৬২ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে আর মাত্র ৬ রান যোগ করে ৬৮ রানে ফিরে যান। তারপর আর কেউ তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নাসির অবশ্য দারুণ খেলছিলেন, কিন্তু তিনি ৪৫ রানে সাজঘরে ফেরার পর তিন শ’ ছোঁয়াটাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ছক্কা হাঁকিয়ে অন্তত বাংলাদেশ দলকে লড়াইয়ের পুঁজি পাইয়ে দেন তাইজুল। অসিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস ছিল ২০০৬ সালে ফতুল্লায় ৪২৭। এটি দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু আক্ষেপ জমা হয়েছে কম রান হওয়ায়। কারণ সাব্বির আগেরদিন বলেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেটটাই বুঝতে পারেননি। এ বিষয়ে নাসির বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যে রকম উইকেট তাতে আমার মনে হয় আমরা ১০০ থেকে ১৫০ রান কম করে ফেলেছি। আমাদের অন্তত ৪০০ থেকে ৪৫০ রান করা উচিত ছিল। এটা হলো ফ্ল্যাট উইকেট। বোলিং করা কঠিন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজ সহজ।’ সেই সহজ কাজটা লিয়নের কাছে ৭ উইকেট দিয়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে পারেননি বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। ঠিকই পেশাদার টেস্ট খেলুড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা বহুদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করেছে। বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে ব্যাকফুটে। আর এবার বাংলাদেশ সফরে আসার পর থেকেই অসিরা নেটে সিরিজ শুরুর আগে খুব গুরুত্ব দিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করেছে ধীরগতির নিচু হয়ে আসা বলে। তাই তারা বাংলাদেশ দলকে প্রথম ইনিংসে ১১৩.২ ওভার বোলিং করে ঠিকই উইকেট বুঝে উঠেছে এবং সেভাবেই স্বাগতিক বোলারদের মোকাবেলা করেছে। সাগরিকার উইকেটেও মিরপুরের মতো সেই বল জোরালোভাবে লাফিয়ে ওঠার প্রবণতা এবং বড় টার্ন নেয়ার পরিস্থিতি নেই। শেষ পর্যন্ত হয়তো পাঁচদিনেই গড়াচ্ছে সিরিজের এ দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি। কারণ দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সাগরিকার উইকেট নাকি আরও ব্যাটিংবান্ধব হয়ে ওঠে। আজ তৃতীয়দিনই হয়তো দু’দলের অবস্থান অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
×