ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু লাভের কথা না ভেবে শ্রমিক কল্যাণে দৃষ্টি দিন ॥ মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

বাইরের উস্কানিতে শিল্প কারখানায় বিশৃঙ্খলা বিষয়ে সতর্ক থাকুন

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৮ আগস্ট ২০১৭

বাইরের উস্কানিতে শিল্প কারখানায় বিশৃঙ্খলা বিষয়ে সতর্ক থাকুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাইরের কারও উস্কানিতে শিল্প-কারখানায় যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য মালিক-শ্রমিকসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি জীবন জীবিকার সুযোগ পাচ্ছেন, অর্থ উপার্জন করছেন। সেই প্রতিষ্ঠান যেন ভালভাবে চলতে পারে, অন্য কারও বা বাইরের কারও উস্কানিতে কোন রকম দুর্ঘটনা যেন সেখানে না ঘটে। সেটা বিশেষভাবে দেখতে হবে সবাইকে। পরস্পরের লাভের জন্য শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মালিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পের মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা ব্যবসা করে অবশ্যই আপনাদের লাভ নেবেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে আপনারা শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন এটা অব্যহত রাখতে হবে। এরাই তো আপনাদের কারখানা চালু রাখে। আপনারা যা কিছু উপার্জন করেন তা এই শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মক্ষেত্রে নিহত ও পঙ্গু শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে তৈরি পোশাক শিল্পের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য কিছু বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাকে দায়ী করে আরও বলেন, ‘শ্রমিক রাজনীতির নামে কিছু এনজিও করে, আবার তারা শ্রমিক নেতাও সেজে যান। শ্রমিকরা কত টাকা বেতন বা কি পেল, তাতে ভাগ খাওয়ার জন্য নানাভাবে ঘোঁট পাকায়। এদের হাত থেকে সব সময় দূরে থাকবেন। কোন সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। আপনাদের যা সমস্যা হবে আমরা তো দেখব। সম্প্রতি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির ঘটনা ঘটছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মক্ষেত্রে নিহত এবং আহত শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার জন্য সকল প্রস্তুতকারক এবং রফতানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় কল্যাণ তহবিলের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই সকল গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য ছাড়া যে সকল প্রতিষ্ঠান পোশাক রফতানি করে, তাদেরও কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনতে হবে। রফতানি করতে হলে তাদের বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএ’র সদস্য হতে হবে। বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিচ্ছি। প্রথমবারের মতো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বজনিত কারণে ২৩৪ জন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করা হয়। রফতানি মূল্যের শূন্য দশমিক শূন্য তিন হারে অর্থ বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ’র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান। একজন গার্মেন্টস শ্রমিক কোন দুর্ঘটনায় নিহত বা গুরুতর আহত হলে তার পরিবার ৩ লাখ টাকা করে এই তহবিল থেকে অনুদান পাবে এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে যে কোন মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের স্বজনরা ২ লাখ টাকা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রফতানি পণ্য বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন রফতানি বাজার খোঁজা এবং অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে বলেন, আমাদের রফতানি পণ্য বাড়াতে হবে। কোন্ দেশে কি ধরনের চাহিদা সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ভবিষ্যতে কোন্ দেশে কত রফতানি করতে পারি সেটা বের করতে হবে। অবশ্য আমাদের নিজের দেশেও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো পণ্য রফতানির জন্য ভাল গন্তব্য হতে পারে। সেখানে বিশাল বাজার রয়েছে। শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি বড় লোককে বড় লোক বানানোর জন্য নয়, আমার রাজনীতি গরিব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আমার রাজনীতি এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য। চলতি অর্থবছরে বাজেট প্রস্তাবনায় এ শিল্পের জন্য অগ্রিম আয়কর এক শতাংশ ঘোষণা করেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে পূর্বের দশমিক সাত শূন্য শতাংশে বহাল রাখার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য তো আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা যদি আয়কর বা ট্যাক্স তুলতে না পারি, তাহলে আমরা উন্নয়নটা করব কোথা থেকে? তিনি বলেন, আমরা বিদেশের কাছে হাত পেতে বা ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আমাদের নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে হবে। শেখ হাসিনা শ্রমিক-মালিকদের কল্যাণে ও শিল্প বিকাশে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আফরোজা খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশী নাবিকদের কর্মসংস্থানে আইএমও’র সহায়তার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিকসংখ্যক বিদেশী জাহাজে বাংলাদেশী নাবিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) সহায়তা চেয়েছেন। সফররত আইএমও’র মহাসচিব কিতক লিম রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ সহায়তার আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে উপকূলীয় শিপিং খাতের উন্নয়নে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম সংস্থার আরও বেশি অংশগ্রহণ কামনা করে। তিনি বলেন বাংলাদেশ উচ্চমানের অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করছে। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে শিপিং খাতে সক্ষমতা গড়ে তুলতে আইএমও’র সহায়তা প্রয়োজন। তিনি সমুদ্র দূষণের বিষয়ে আইএমও’র দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এর প্রভাবে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। কিতক লিম বাংলাদেশী নাবিকদের প্রশংসা করে বলেন, আইএমও’র বি-ক্যাটাগরির সদস্য বাংলাদেশ সংস্থাটিতে ভাল করছে এবং এ খাতে এ দেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমও প্রধান বলেন, তিনি তার বাংলাদেশ সফরকালে চট্টগ্রামে জাহাজ তৈরির কারখানা ও মেরিটাইম একাডেমিসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×