ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত ১০ হাজার স্থান ছাড়া পশু কোরবানি নয়

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৮ আগস্ট ২০১৭

নির্ধারিত ১০ হাজার স্থান ছাড়া পশু কোরবানি নয়

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীসহ সারাদেশের দশ হাজারের অধিক স্থানে কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন অনুযায়ী পরিবেশ দূষণ রোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব স্থানে স্থানীয় নাগরিকদের পশু কোরবানি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় পরবর্তী সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণে ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষই বর্জ্য অপসারণে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মোট ১ হাজার ১৭১টি স্থানে পশু কোরবানির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। দুই সিটির মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬শ’ ২৫টি স্থান এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫শ’ ৪৬টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিএনসিসি প্রতিটি ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে ৫টি করে প্যান্ডেলসহ জবাইখানা নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই সিটিতে পশুর বর্জ্য ফেলার জন্য বিনামূল্যের প্রায় ৫ লাখ পলিব্যাগ বিতরণ করা হবে। কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসব ব্যাগ সংগ্রহ করবেন। দুই সিটিতে ঈদে নাগরিক সেবায় নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগকৃতসহ প্রায় ১৪ হাজার লোক কাজ করবেন। ঈদের দিন দুপুর থেকেই তারা কাজ করবেন। জানা গেছে, কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে পশু জবাইয়ের স্থানের তালিকা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সহায়তা পেতে তাদের নির্ধারিত মোবাইল নম্বর প্রকাশ করা হচ্ছে। এমনকি নাগরিকদের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে ফেসবুক পেজ ও নগর এ্যাপসও ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের ধারণা মতে, এ বছর রাজধানীতে ৫ লাখের বেশি পশু কোরবানি দেয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ২ লাখ ২৫ হাজার এবং দক্ষিণে ২ লাখ ৮০ হাজারের মতো। পশু কোরবানির নিয়ম অনুযায়ী রাস্তার ওপর ও খোলা স্থানে কোন পশু জবাই নিষিদ্ধ তা এ বছরও বলবৎ থাকবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থান ও বাড়ির আঙ্গিনা ছাড়া অন্য কোথাও পশু কোরবানি করা যাবে না। এছাড়া বীভৎসতা এড়াতে কোন পশুকে যেন বাচ্চা শিশুদের চোখের সামনে কোরবানি না দেয়া হয় তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে এ বছর ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণসহ ব্যাপক প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সঠিক স্থানে কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য জনসচেতনতা তৈরিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর মেয়রদের জুলাই ও আগস্ট মাসে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে দুই মাসব্যাপী ক্রমান্বয়ে সারাদেশের সকল মেয়রদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাশকদের মাধ্যমে তারা সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত করবেন। সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুশাসন বাস্তবায়ন করতে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সারাদেশে সিটি কর্পোরেশন পৌর এলাকাসহ সকল স্থানে সুষ্ঠুভাবে কোরবানি করা ও পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দশ হাজারের অধিক স্থান নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। ঈদের দিন দুপুর থেকেই মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দেয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপন। এমনকি কমিউনিটি রেডিওতেও এ সম্পর্কে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের কথা প্রচার করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। গত বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তথ্যসচিব মরতুজা আহমদের সভাপতিত্বে আসন্ন কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভাটি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা শহরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত জবাইখানায় কোরবানি করা হলে পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোরবানির পশু জবাই না করার জন্য এবং যেখানে সেখানে কোরবানির বর্জ্য না ফেলার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। সভায় এসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানানো হয়। সভায় প্রধান তথ্য অফিসার কামরুন নাহার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোঃ আবদুল হালিম, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম, এটিসিও’র পরিচালক ফারজানা মুন্নী, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উভয় সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিরা জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিগত দুই বছরে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সব বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতি ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে ৫টি করে জবাইখানা নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষিণের প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোট ৬শ’ ২৫টি জবাইখানা নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় তথ্য সচিব নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোরবানির পশু জবাই না করার জন্য নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং, ইমামদের মাধ্যমে প্রচার, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর অন্য বছরের চেয়ে কম সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করার কথা ভাবছে। ঈদের দিন দুপুর থেকে ঢাকা উত্তরে নিয়মিত কর্মচারীসহ ১ হাজার ৯শ’ ৯৮ জন এর সঙ্গে বাড়তি ঠিকাদারি ভিত্তিতে ১ হাজার ৭৫ জন শ্রমিক কাজ করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম এ রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, পশু কোরবানির স্থান ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা এ বছর বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ৫শ’ ৪৬টি কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করেছে।
×