ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে কোরবানির হাট

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৭ আগস্ট ২০১৭

অনলাইনে কোরবানির হাট

হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা আবহমানকালের ঐতিহ্য। তবে শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনেক সময় এই পরম্পরা রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। এই বাস্তবতায় ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে ‘অনলাইন-গরুর হাট।’ পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রসাধনীর পাশাপাশি প্রতিবছর ঈদ-উল-আযহা এলেই সওদায় সবচেয়ে গুরুত্ব পায় কোরবানির পশু। কিন্তু এ সময়টায় যথারীতি হাটে-ঘাটে-মাঠে থাকে যানজট আর জনজট। এর ওপর দালালদের খপ্পর, ছিনতাইয়ের ভয়, জাল টাকা ইত্যাদি নানা ঝামেলা তো আছেই। সেসব ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে হালে প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই পরিবার-পরিজনকে নিয়ে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন নগরবাসী। ফলে স্থায়ী/অস্থায়ী কিংবা অঞ্চলভিত্তিক পশুরহাট বসার আগেই অনলাইনে কোরবানির হাট এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাইরে থেকেও ক্রেতারা এখন ভিড় করছেন অনলাইন কোরবানির হাটে। প্রবাসী ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে ২০০৫-০৬ সালের দিকে ওয়েব বাংলাদেশ ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট পবিত্র ঈদ-উল-আযহার সময় কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি শুরু করে। প্রবাসীরা পছন্দের পশু কিনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করলে বাংলাদেশে তাদের দেয়া নির্ধারিত ঠিকানায় গরু পৌঁছে দিত ওয়েবসাইটটি। এখন দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ায় এবং অর্থ লেনদেনের পদ্ধতি আগের চেয়ে সহজ হওয়ায় ই-কমার্স সাইটগুলোর প্রসার বাড়ছে। ওয়েবসাইটগুলোতে গরু বা ছাগল বিক্রেতারা কাক্সিক্ষত দাম চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন। আর পশুটি পছন্দ হলে ক্রেতারা মুঠোফোনে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দামদর চূড়ান্ত হওয়ার পর ক্রেতারা নগদ পরিশোধ করে পশুটি নিয়ে আসেন। ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ভার্চুয়াল দুনিয়াতে বসে গেছে কোরবানির গরুর হাট। দেশের বেশিরভাগ ই-কমার্স সাইটগুলো এখন ঝুঁকছে এই বেচাকেনার দিকে। বিক্রয় ডটকম, আমারদেশ ই-শপ, এখানেই ডটকম, হাটেরগরু ডটকম ছাড়াও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি পশু কেনাবেচার জন্য খোলা হয়েছে নতুন নতুন ফেসবুক পেজও। গবাদিপশুর ছবি, বিবরণ ও দাম উল্লেখ করে কোন গরু কোন এলাকা থেকে আনা হয়েছে তারও বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এসব পেজে। গত বছর অনলাইনে যারা কোরবানির পশু বিক্রি করছেন তাদের অনেকেই বলেছেন, আগের তুলনায় অনলাইনে ব্যবসাটির পরিধি বেড়েছে বহুগুণ। যদিও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই কারও কাছেই। তবে অনলাইন পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতিবছরেই তাদের পশু বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে। অনেকের দাবি, বেশ কয়েক বছর ধরে আগের বছরের দ্বিগুণ পরিমাণ কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি করছেন তারা। কোরবানি উপলক্ষে অনলাইনে পশু ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুটা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বেশিরভাগ ক্রেতাই সুবিধাজনক মনে করছেন এই অনলাইন হাটকে। আশার কথা হচ্ছে, পেশাদার অনলাইন বাজারগুলোর (ই-কমার্স সাইট) পাশাপাশি কেবলমাত্র ঈদকে কেন্দ্র করেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কোরবানির হাট। আর সম্প্রতি অনলাইনে পশুর হাটগুলো বেশ জমজমাট। পেজগুলোতে পশুর ছবি, বিবরণ, উচ্চতা, ওজন, দাম এবং কোন এলাকা থেকে এগুলো আনা হয়েছে সেসবও তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, অনলাইনেই পশুটি দেখে পছন্দ করলে কিছু অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করার মাধ্যমে বুকিং দিতে হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে তারাই বাড়িতে পশুটি পৌঁছে দেয়। অনলাইনে বিক্রয় ডটকম, ক্লিকবিডি ডটকম, কেইমু ডটকম, বগডুম ডটকম, এখনি ডটকম, বেঙ্গল মিট এবং আমাদের দেশ ই-শপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কোরবানির গরু-ছাগলের কেনা বেচার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া কোরবানির কেনাকাটায় নানা অফার পাওয়া যাচ্ছে অনলাইন মার্কেটে।
×