ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভক্তদের তান্ডব, আগুন ॥ নিহত ৩১ গ্রেফতার আড়াই হাজার সেনা মোতায়েন, চন্ডিগড় ও পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে কারফিউ

ধর্ষণ মামলায় দোষী ভারতের ধর্মগুরু রাম রহিম সিং

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৬ আগস্ট ২০১৭

ধর্ষণ মামলায় দোষী ভারতের ধর্মগুরু রাম রহিম সিং

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিং ওরফে ‘রকগুরু’ ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৫ বছর আগে তার বিরুদ্ধে দুই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। শুক্রবার হরিয়ানার পঞ্চকুলার সিবিআই আদালত ৫০ বছর বয়সী এই ধর্মগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করে। এ খবরে হরিয়ানা ও পাঞ্জাব রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তান্ডব শুরু করে তার সমর্থকরা। দিল্লীতে ট্রেনের দুটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেয়। চন্ডিগড় ও পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঠেকাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সোমবার তার সাজা ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত। এই ধর্মগুরুকে আটক করে আম্বালা আদালতে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সিবিআই। ধর্মগুরু রাম রহিম সিং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার খবরে তার লাখ লাখ সমর্থক রাস্তায় নেমে এসে তান্ডব শুরু করে। লাঠি, বাঁশ, ইট-পাথর নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। হরিয়ানা রাজ্যের বিদ্যুত সংযোগ কেটে দেয়া হয়। রেলস্টেশন, থানা, পেট্রোল পাম্প, সরকারী অফিসসহ অনেক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এদের হামলা থেকে বাদ যায়নি গণমাধ্যম কর্মীরাও। ভাংচুর করা হয় গাড়ি ও দোকান-পাট। যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে এই দুই রাজ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আকাশে চক্কর দেয় সেনাবাহিনীর কপ্টার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে রাম রহিম সিংয়ের সমর্থকদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩১ জন নিহত ও কয়েক শ’ লোক আহত হয়েছেন। রকগুরুর আড়াই হাজারেরও বেশি ভক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন। খবর এনডিটিভি, পিটিআই, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। শুক্রবারের এই রায় নিয়ে সহিংসতা এড়াতে আগে থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও এতে কাজ হয়নি। পুলিশ রকগুরু সমর্থকদের দমাতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলেও এতে কাজ হয়নি। নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে দাবি করা রাম রহিম সিংয়ের কয়েক লাখ ভক্ত রয়েছে। পনেরো বছর আগে নিজ আশ্রমেই দু’জন নারী ভক্তকে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গুরমিত রাম রহিমের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম তার আশ্রমের নাম অনুসারেই ডেরা সাচ্চা সৌদা রাখা হয়েছে। হরিয়ানার সিরসা শহরে তার হাই-টেক ও সুরম্য আশ্রম রয়েছে। রায়ের আগে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে রাজধানী দিল্লীতেও। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্য দিয়ে চলাচল করে এমন দু’শ’রও বেশি ট্রেন পরবর্তী তিনদিনের জন্য বাতিল করা হয়েছে। সকল স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ স্থগিত করা হয়েছে। পঞ্চকুলা ও চ-ীগড়ের স্টেডিয়াম ও স্কুলগুলোকে প্রশাসন নিজেদের দখলে নিয়ে অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে যাতে প্রচুর সংখ্যায় ওই গুরুর ভক্তদের গ্রেফতার করে রাখা যায়। রাজ্য প্রশাসন প্রথমে গুরমিত রাম রহিমের ভক্তদের বিপুল সংখ্যায় জমায়েত নিয়ে কোন ব্যবস্থা না নিলেও গত বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে রাত থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেয়া হয়। চণ্ডীগড়-পঞ্চকুলা প্রবেশের সকল সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়, প্রতি গাড়িতে তল্লাশি চলতে থাকে। অন্যদিকে রাতভর পুলিশ কর্মকর্তারা মাইক হাতে রাস্তায় জমায়েত হওয়া ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। গভীর রাতে রাম রহিমের একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। এতে শান্তি বজায় রাখতে ভক্তদের ফিরে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। এতেও কাজ হয়নি। একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, নায়ক ও পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন এই ধর্মগুরু। শিখ, হিন্দু, মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মের চেতনা তিনি তৈরি করেছেন তার আশ্রম। নাম দিয়েছেন ডেরা সাচ্চা সৌদা। শুক্রবার সকালে এক বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে নিজ আশ্রম থেকে রওনা হন গুরমিত রাম রহিম সিং। সঙ্গে ছিল তার নিজস্ব কমান্ডো বাহিনী। খবরে বলা হয়েছে এই ধর্মগুরুর সঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক মন্ত্রী ও এমপির সখ্যতা রয়েছে।
×