ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৬০ কেজি ওজনের ডান পা নিয়ে রিজিয়া বেগম বার্ন ইউনিটে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ আগস্ট ২০১৭

৬০ কেজি ওজনের ডান পা নিয়ে রিজিয়া বেগম বার্ন ইউনিটে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ৪০ বছর বয়সী সিলেটের রিজিয়া বেগম বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি। তিনি তার ৬০ কেজি ওজনের ডান পা নিয়ে চলাফেরা করতে অক্ষম। অন্যদের মতো প্রয়োজনে তিনি পা নাড়াতে পারেন না। তার পা-টি নাড়াতে প্রয়োজন পড়ে ২ থেকে ৩ জন মানুষের সাহায্য। এ অসহায় নারীটি সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন, তবে ২২ বছর বয়সে দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেয়ার পর থেকেই তার পা ফুলতে শুরু করে। প্রথমে সামান্য ফোলার ওষুধ নিয়ে সুস্থ হলেও কিছুদিনের মাঝেই আবার আগের রূপ ধারণ করতে থাকে। স্বামী আব্দুল মালেক গত ১৮ বছরে তাকে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছেন, কোন ফল পাননি। তবে প্রায় একই রকম রোগে আক্রান্ত মুক্তামণির সফল অস্ত্রোপচারের খবর শোনার পর সিলেটের ওসমানী নগরের গরিব কৃষক পরিবারটি আবার আশায় বুক বাঁধেন। তাই রিজিয়াকে ২২ আগস্ট নিয়ে আসা হয় (ঢামেক) হাসপাতালে। রিজিয়া বেগমের বিষয়ে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি এলিফ্যান্টাইসিস রোগে আক্রান্ত, যাকে এলিফ্যান্ট ফুট ডিসিস’ও বলা হয়। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা এবং রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে অনেকের কাছেই এটি গোদ রোগ হিসেবে পরিচিত বলে জানান ড. সামন্তলাল সেন। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার জন্য কয়েক-দফা অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ রোগ বাংলাদেশে খুব বিরল নয় বলে উল্লেখ করেন ডাঃ সেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর ফোলা পা অনেকটা স্বাভাবিক আকারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে যাতে তিনি হাঁটতে পারেন। রিজিয়া বেগমের এ রোগ গত দুই দশকে তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। হাঁস-মুরগি বা গবাদিপশু লালনপালন থেকে ঘরদোরের কাজ এখন বলতে গেলে রিজিয়া বেগম করতে পারেন না। নিজের ছোটখাটো প্রয়োজনেও অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। গরিব পরিবারটির জন্য এখন অনেকটাই বোঝা হয়ে গেছেন তিনি। রিজিয়া তার সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘দ্বিতীয় মেয়ের জন্মের সময় খেয়াল করি আমার পা ফুলে যাচ্ছে। অল্প চিকিৎসাতে সমস্যাটা সেরেও গিয়েছিল। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই এটা আবার ফিরে আসে। অনেক আশা নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমার সুস্থতার জন্য সকলে দোয়া করবেন।’
×